ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বলছেন, ক্যাম্পাসে সব শিক্ষার্থীর সহাবস্থান রয়েছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই ক্লাস-পরীক্ষা ও অন্যান্য কাজ করছে।
নিয়মিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্রদল ক্যাম্পাসে সক্রিয় হলে এবং ডাকসু নির্বাচনে অংশ নিলে তাদের বাধা দেওয়া হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
তবে এই বিষয়ে ভিন্নমত জানিয়ে বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদী তালুকদার পরিস্থিতির উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদক্ষেপ চেয়েছেন।
আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে অচল ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) সচল করতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে ছয় বছর আগে একটি রিট আবেদন হয় উচ্চা আদালতে। ওই আবেদনের নিষ্পত্তি করে গত বছর ১৭ জানুয়ারি এক রায়ে হাই কোর্ট ছয় মাসের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আবেদনে ওই রায় চেম্বার আদালতের স্থগিতাদেশে আটকে যায়, যার সুরাহা রয়েছে গত রোববার আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ তুলে নিয়ে আবেদনটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়ায়।
গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে এসে হামলার শিকার হন ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই বৈঠকের জন্য ছাত্রদলের দুই নেতাকে পাহারা দিয়ে ক্যাম্পাসে নিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সকাল ১১টা থেকে বেলা সোয়া ১টা পর্যন্ত এই সভা হয়।
সভা শেষে ঢাবি শাখা ছাত্রদল সভাপতি মেহেদী তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, “সহাবস্থান নিয়ে সমস্যা আছে। সহাবস্থানতো নাই বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে।
“বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নাই। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুতই পদক্ষেপ নিবে।”
তার এই অভিযোগ নাকচ করে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ছাত্র-ছাত্রীর সহাবস্থান আছে। তারা ক্লাস করছে, পরীক্ষা দিচ্ছে, আড্ডা দিচ্ছে, অন্যান্য কাজ করছে। এখানে সহাবস্থান না থাকার কিছু নেই।”
ছাত্রদলকে নিয়ে তিনি বলেন, “তাদের যারা নেতা, তারা অনেক আগে পাস করে বেরিয়েছে। তারা যদি নিয়মিত ছাত্রদের নিয়ে ক্যাম্পাসে সক্রিয় হয়, নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে আমরা কোনো বাধা দেব না।”
এদিকে ডাকসুর খসড়া ভোটার তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান জানিয়েছেন। তবে প্রার্থী এবং ভোটার কারা হবেন- সে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনায়ও এ বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক আইন বিভাগের অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
অন্যদিকে এ নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যেও রয়েছে ভিন্নমত।
ছাত্রলীগ নেতা সনজিত বলেন, “আমরা বলছি, যারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন এবং অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তারা ভোটার ও প্রার্থী হতে পারবেন।”
ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা না হলেও ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীর বলেন, “যেহেতু অনেক দিন ধরে নির্বাচন হয়নি, আমরা চাইব একটা নির্দিষ্ট সেশন ধরে ভোটার ও প্রার্থী করা হোক। আর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা এমফিল শিক্ষার্থীদের ভোটার করা যেতে পারে।”
অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “গঠনতন্ত্র পরিমার্জন, পরিবর্ধন ও সংশোধন নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর বক্তব্য আমরা শুনেছি। তারা তাদের বক্তব্য বিস্তারিতভাবে দেওয়ার জন্য সময় চেয়েছে। আগামী সোমবারের মধ্যে এ বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দেওয়া যাবে। এরপর আমরা চূড়ান্ত সুপারিশ করব।”