চালের ব্যবসায় যুক্ত সাধন খাদ্যমন্ত্রী

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করতে চলা শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভায় অনেকগুলো চমক এসেছে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে উত্তরের জেলা নওগাঁর এক নেতাকে খাদ্যমন্ত্রী করা।

সাদেকুল ইসলাম নওগাঁ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2019, 05:42 PM
Updated : 7 Jan 2019, 10:12 AM

নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) আসনের থেকে তিনবার নির্বাচিত সাধন চন্দ্র মজুমদার হচ্ছেন নতুন খাদ্যমন্ত্রী, যার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কৃষি পরিবারে। পারিবারিক সূত্রেই ধান-চালের ব্যবসায় জড়িত তিনি।

তাকে খাদ্যমন্ত্রী করায় শেখ হাসিনা বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন সাধনকে চেনা নওগাঁর আওয়ামী লীগ নেতারা।

জেলার প্রবীণ নেতা ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট এ কে এম ফজলে রাব্বি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাধন চন্দ্র মজুমদার কৃষক পরিবারেই বেড়ে উঠেছেন এবং তিনি নিজেও কৃষি পেশায় নিয়োজিত। কাজের উপযুক্ত ক্ষেত্র তিনি পেয়েছেন। তার হাত ধরে শুধু নওগাঁ নয়, সারা দেশে কৃষি ও কৃষকের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।”

বাংলাদেশের চালের যোগানের একটি বড় অংশ আসে উত্তরের জেলাগুলো থেকে, ওই জেলাগুলোর মধ্যে নওগাঁ অন্যতম। সেখান থেকে এই পেশায় জড়িত একজনকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া, তিনি পূর্বসূরিদের চেয়ে ভালো করবেন বলে মনে করছেন নওগাঁ ধান-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন।

তিনি বলেন, “খাদ্য ভাণ্ডারের মধ্যেই তার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। তাকে খাদ্যমন্ত্রী নিয়োজিত করার বিষয়টি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আমি মনে করি, ইতোপূর্বে দায়িত্বপ্রাপ্ত খাদ্যমন্ত্রীদের চেয়ে সাধন চন্দ্র মজুমদার অবশ্যই ভালো করবেন।”

বিদায়ী সরকারের খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা। ২০১৭ সালে আগাম বন্যায় হাওরে ফসল হানিতে মজুদে টান পড়লে চালের দাম অনেক বেড়ে যায়, সে সময় বিভিন্ন মহলের সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন কামরুল ইসলাম।

সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টির সঙ্গে ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের অশোভন আচরণের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের আলোচনা সভায় খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

ওই সময় চাল ব্যবসায়ীদের ওপরও চড়াও হয়েছিল সরকার, দেশের বিভিন্ন জায়গায় চালকল ও আড়তে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। এবারও ভোটের পরপরই চালের দাম কেজিতে অন্তত ২ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন চালকল মালিকরা।

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শিবপুর বলদাহাট গ্রামের প্রয়াত কামিনী কুমার মজুমদার ও সাবিত্রী বালা মজুমদারের ঘরের জন্ম সাধনের। নয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন অষ্টম।

৬৮ বছর বয়সী সাধনের চার মেয়ে, স্ত্রী চন্দনা মজুমদার মারা গেছেন ১৯৯২ সালে। এখন নওগাঁ শহরের পাশাপাশি গ্রামের বাড়িতেও বসবাস করেন সাধন চন্দ্র মজুমদার। সেখানেই তাদের পারিবারিক চালের আড়ত রয়েছে।

১৯৫০ সালের ১৭ জুলাই জন্ম নেওয়া সাধন নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএ (স্নাতক) পাশ করার পর বাপ-দাদার পেশা কৃষি ও ধান-চালের ব্যবসা শুরু করেন।

ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সাধন স্থানীয় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে থাকার পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

জনপ্রতিনিধি হিসেবে সাধনের যাত্রা শুরু হয় নিজের ইউনিয়ন হাজীনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। এরপর আশির দশকে এরশাদ আমলে আওয়ামী লীগের সমর্থনেই নিয়ামতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন তিনি।

পরে কয়েক দফায় নওগাঁ-১ আসনে নৌকার প্রার্থী হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে গেলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সংসদে আসেন সাধন। পরে ২০১৪ সালের দশম সংসদ ও গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের নির্বাচিত হন তিনি।

সাধন চন্দ্র মজুমদার সাংসদ হওয়ার পর ‘ঠাঁ ঠাঁ বরেন্দ্র অঞ্চল’ হিসাবে পরিচিত নিয়ামতপুর-সাপাহার ও পোরশা এলাকায় বৃক্ষরোপনে জোর দেন। পাশাপাশি রাস্তা-ঘাঁট, ব্রিজ-কালর্ভাট, স্কুল-কলেজ মাদ্রাসাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে এলাকায় প্রশংসিত হন তিনি। এলাকার মানুষের কাছে ভদ্র, বিনয়ী ও মিষ্ঠ ভাষী হিসেবে পরিচিতি রয়েছে তার।

তাকে মন্ত্রী করায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিভাষ চন্দ্র মজুমদার বলেন, “জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন যোগ্য ব্যক্তিকে মন্ত্রিপরিষদে ঠাঁই দিয়েছেন।”

জেলায় পূর্ণমন্ত্রী পাওয়া আনন্দ প্রকাশ করেন জেলা আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক রণজিত কুমার সরকার।

নওগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইকবাল শাহারিয়ার রাসেল বলেন, “নওগাঁ খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা- এ বিষয়টি চিন্তা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধন চন্দ্র মজুমদারকে খাদ্যমন্ত্রী নিযুক্ত করার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

“তিনি খাদ্যমন্ত্রী হওয়ায় জেলার সাবির্ক উন্নযনসহ নওগাঁয় ধান-চালের উৎপাদন ঘিরে একটা শিল্প এলাকা হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।”