মন্ত্রিসভায় নতুনদের ‘প্রমাণের সুযোগ’

শেখ হাসিনার নতুন সরকারে এক ঝাঁক নতুন মুখের সমাবেশকে স্বাগত জানাচ্ছে পর্যবেক্ষক মহল; তারা বলছেন, এতে নতুনরা নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাবে।

ফয়সাল আতিক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2019, 04:03 PM
Updated : 6 Jan 2019, 07:08 PM

একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের পর শেখ হাসিনা সোমবার তার নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে শপথ নিতে যাচ্ছেন। ৪৭ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভার ২৭ জন একেবারে নতুন।

মন্ত্রিসভায় নতুনদের স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা খুবই ভালো হয়েছে। পুরনোদের তো নতুনদের জায়গা ছেড়ে দিতেই হবে।”

নতুন সরকারে ঠাঁই হয়নি বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের মতো প্রবীণ নেতাদের।

পক্ষান্তরে ঠাঁই পেয়েছেন মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, এ কে এম এনামুল হক শামীম, জাহিদ আহসান রাসেলের মতো অপেক্ষাকৃত নবীনরা।

নতুনদের সামনে ‘বিরাট চ্যালেঞ্জও আছে’ উল্লেখ করে ইব্রাহিম খালেদ বলেন, “ভূমি ধসের মতো বড় বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে এবারের সরকার। মানুষের অনেক আশা, প্রত্যাশা। নতুনদের নিয়ে সেইসব পূরণ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলে আমি মনে করি।”

টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের সময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বাদ দিয়েছেন দলের প্রবীণ সব নেতাদের।

এই দফায় প্রথম মেয়াদে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের সময়ও নতুনদের উপর আস্থা রেখেছিলেন শেখ হাসিনা। এবারও তেমনই ঘটেছে।

ইব্রাহিম খালেদ বলেন, “তবে সব ভরসার জায়গা হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি খুবই শক্ত হাতে হাল ধরেন, তাহলে নতুনদের নিয়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব বলে আমি মনে করি।”

তিনি বলেন, “বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ-সমালোচনা ছিল। তাদের নতুন কেবিনেট থেকে বাদ দেওয়া একটি ভালো এবং শক্তিশালী সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

বিদায়ী সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী সমালোচনার মুখে ছিলেন; তাদের মধ্যে রয়েছেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।

নতুন মন্ত্রিসভায় বিতর্কিতদের না রাখাকে ‘ইতিবাচক’ মনে করছেন অধিকারকর্মী খুশি কবির। তবে তাদের পরে ফিরিয়ে আনাও ঠিক হবে না বলে তার মত।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিতর্কিত শাজাহান খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নাম দেখা যাচ্ছে না। আবার বর্ধিত মন্ত্রিসভায় তারা এসে যান কি না, সেটাও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।”

নতুনদের মূল্যায়ন করতে আরও দুই-তিন মাস সময় নিতে চান খুশি কবির।

সেইসঙ্গে অনেক প্রবীণ মন্ত্রীদের না রাখা এবং কয়েকজনকে আবার মন্ত্রী করে ফিরিয়ে আনার কারণ খুঁজে না পাওয়ার কথা বলেছেন তিনি।

“অনেক প্রবীণ মন্ত্রীকে সরানো হয়েছে। কী কারণে তাদের সরানো হল, সেটা দেখার বিষয়। দীপু মনি ও হাছান মাহমুদের নাম দেখা যাচ্ছে। ২০১৪ সালের সরকারে তাদের কেন রাখা হয়নি কিংবা এবারের সরকারে কেন রাখা হয়েছে, সেটাই দেখার বিষয়।”

মন্ত্রিসভার নতুন সদস্য (ওপরে বাঁ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে) নুরুল মজিদ হুমায়ন, এ কে এ মোমেন, শ ম রেজাউল করীম, কামাল মজুমদার, মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

ব্যবসা-বাণিজ্য খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে নতুন মুখ আসায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন আরও গতি পাবে বলে মনে করেন এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। এই পরিবর্তন পুরোনো কারও ব্যর্থতার পরিচয় বহন করে না বলেও মন্তব্য তার।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিবর্তন মানে এই নয় যে আগের জন খারাপ করেছেন। ম্যানেজমেন্টের দৃষ্টিভঙ্গিতে বলতে হয়, এটা হচ্ছে নতুন দক্ষতার সমন্বয়। এক মন্ত্রণালয় থেকে আরেক মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর মানে হচ্ছে কাজে গতি আনা এবং আরও বেশি নতুন আইডিয়ার যুক্ত করা। আগের মন্ত্রণালয়ে যে তিনি খারাপ করেছেন এটা বলা যাবে না।

“পরিবর্তিত মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনামন্ত্রী অর্থমন্ত্রী হলেন। টিপু মুন্সী সাহেব বাণিজ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তারা বেসরকারি খাতের চলমান প্রবৃদ্ধিকে আরও বেগবান করবেন।”

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান মন্ত্রিসভায় নারী সদস্যের সংখ্যা তুলনামূলক কম বলে মনে করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া নতুন সরকারে মন্ত্রী হিসেবে নারী থাকছেন দীপু মনি, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মুন্নুজান সুফিয়ান ও উপমন্ত্রী হিসেবে হাবিবুন নাহার। এর মধ্যে খুলনার মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের স্ত্রী হাবিবুন নাহার এবারই প্রথম দায়িত্ব পেলেন। অন্য দুজন আগেও ছিলেন।  

“ভবিষ্যতে সুযোগ থাকলে আরও নারী সদস্য যোগ করলে ভালো হবে,” বলেন ইফতেখারুজ্জামান।

সার্বিক মূল্যায়নে তিনি বলেন, “মোটা দাগে নতুনদের প্রাধান্য রয়েছে। এটা নিশ্চয় সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। তারা কী প্রত্যাশা নিয়ে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করছেন এটা যেন ভাবেন। নিজেদের উন্নয়নের সুযোগ, ক্ষমতার কাছে থাকা, সম্পদ বিকাশের সুযোগের মানসিকতা থাকলে খুব ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

“আমি আশা করি, তারা এই মানসিকতা ধারণ করবেন না। জনগণের স্বার্থে দায়িত্ব নেবেন। জনকল্যাণের জন্য কাজ করবেন। নিজেদের সম্পদ বিকাশ বা উন্নয়নে আগ্রহ থাকবে না।”

“তারা প্রথম দিনই নিজেরা নিজেদের কাছে শপথ নেবেন যে আমরা দুর্নীতিমুক্ত থাকব, এটা গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক।

এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কারণ নির্বাচনে অভূতপূর্ব সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করছেন। সেখানে জবাবদিহিতা এবং চেক অ্যান্ড ব্যালেন্সের সুযোগ নেই। এই পরিস্থিতিতে যারা দায়িত্ব নিচ্ছেন, নিজেদেরকেই সজাগ থাকতে হবে।”

নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ নতুন সরকারকে মূল্যায়ন করতে আরও সময় নিতে চান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নতুন মন্ত্রিসভা সবেমাত্র গঠিত হলো। মূল্যায়ন করতে আরও অপেক্ষা করা প্রয়োজন। তারা যখন কাজে হাত দেবে, তখনই বোঝা যাবে, কে কেমন করতে পারে।”