এসেছে দেড়শ কোটি টাকা, পেছনে তারেকের এপিএস: র‌্যাব

ভোটের চার দিন আগে মতিঝিল থেকে আট কোটি টাকা উদ্ধারের পর এমন কোটি কোটি টাকার সঙ্গে তারেক রহমানের সাবেক এক ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দিয়েছে র‌্যাব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2018, 12:37 PM
Updated : 25 Dec 2018, 12:58 PM

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেকের সাবেক এপিএস মিয়া নূরুদ্দীন আহম্মেদ অপু একাদশ সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ (ডামুড্যা-ভেদরগঞ্জ-গোসাইরহাট) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী হয়ে লড়ছেন।

মঙ্গলবার তার প্রতিষ্ঠান আমেনা এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে কোম্পানির এক কর্মকর্তাসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। তাদের একজন হাওয়া ভবনের ‘ঘনিষ্ঠ’ ছিলেন বলে দাবি করেছেন র‌্যাব কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার শুরুতে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় অভিযান চালিয়ে আমদানি-রপ্তানি ও ঠিকাদারি কোম্পানি ইউনাইটেড করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হায়দারকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক মিজানুর রহমান জানান, হায়দারের কাছে প্রায় আট কোটি টাকা এবং ১০ কোটি টাকার চেক পাওয়া গেছে।

সেখানে অপুর নির্বাচনী পোস্টার পাওয়ার পর দুপুরে গুলশানে তার কোম্পানি আমেনা এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জয়নাল আবেদীন ও অফিস সহকারী আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মতিঝিল সিটি সেন্টারের ইউনাইটেড করপোরেশনে পাওয়া আট কোটি টাকা; সঙ্গে অপুর ভোটের প্রচারপত্রও ছিল

এরপর মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় সংবাদ সম্মেলনে এসে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের চার দিন আগে ‘ভয়াবহ ষড়যন্ত্র বানচাল করা হয়েছে’।

দুবাই থেকে প্রায় দেড়শ কোটি টাকা এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, “এর অধিকাংশই হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আনা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল, জাতীয় নির্বাচনকে প্রভাবিত করা।”

ইউনাইটেড করপোরেশন, ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ ও আমেনা এন্টারপ্রইজের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আনা হয়েছে বলে র‌্যাবের দাবি।

সিটি সেন্টারের ইউনাইটেড করপোরেশনের মালিক দুবাই প্রবাসী মাহমুদুল হাসান। ওই ভবনের একই ফ্লোরে থাকা ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের মালিক আতিকুর রহমান ঝালকাঠি উপজেলার ছাত্রদলের সহ-সভাপতি। আমেনা এন্টারপ্রাইজের মালিক অপু।

বেনজীর বলেন, “গতকাল শরীয়তপুর-৩ আসনের মিয়া নূরুদ্দীন অপুকে ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। আমরা দেখেছি, ওই অঞ্চলে টাকা যাওয়ার পর ওখানকার দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে।”

শরীয়তপুরের গোসাইরহাটে সোমবারের সংঘর্ষের চিত্র, যাতে আহত হন প্রার্থী মিয়া নূরুদ্দীন অপু

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অপু এক সময় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। দণ্ড নিয়ে যুক্তরাজ্যে থাকা তারেক কয়েক বছর আগে লন্ডন থেকে সৌদি আরবে ওমরাহ পালনে গেলে তার সঙ্গে তখনও অপুকে দেখা গিয়েছিল।

এবার অপুকে শরীয়তপুরে ধানের শীষের প্রার্থী করার পর স্থানীয় বিএনপি আপত্তি তোলে। ডামুড্যা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল করিম মিয়ার নেতৃত্বে মিছিল করে প্রার্থী বদলানোর দাবিও জানানো হয়েছিল।

সোমবার গোসাইরহাটে নির্বাচনী প্রচারের সময় সংঘর্ষে আহত হন অপু। তার দাবি, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তার উপর হামলা চালায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সংঘর্ষ বাঁধে।

ঢাকায় উদ্ধার অর্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে নূরুদ্দীন অপুর কোনো প্রতিক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। তিনি হাসপাতালে ভর্তি আছেন বলে তার প্রচার শিবির থেকে জানানো হয়েছে।

হায়দার, জয়নাল ও আলমগীর- গ্রেপ্তার এই তিনজনের মধ্যে একজনের সঙ্গে হাওয়া ভবনের ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল’ বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান র‌্যাব প্রধান বেনজীর; তবে তার নাম বলেননি তিনি।

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওই ব্যক্তি হলেন জয়নাল।”

গ্রেপ্তার জয়নাল আবেদীনসহ তিনজন

আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, আসন্ন নির্বাচন প্রভাবিত করতে লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করছেন তারেক। এজন্য তাকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।

ক্ষমতাসীনদের এই অভিযোগের মধ্যে ঢাকায় বিএনপি প্রার্থী ‘মির্জা আব্বাসের কর্মী’ দুই ব্যক্তিকে টাকা ছড়ানোর অভিযোগে পুলিশ গ্রেপ্তার করার পরদিন মতিঝিলে সিটি সেন্টারে অভিযানে যায় র‌্যাব।

সেখানে ইউনাইটেড করপোরেশনে পাওয়া অর্থ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল বলে র‌্যাব জানায়।

কোটি কোটি টাকা উদ্ধারের পর সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব প্রধান বেনজীর আহমেদ

“হুমকি-ধমকির উৎস এই শত শত কোটি টাকা। আমরা এখানে তল্লাশি করে একটি আসনের সমস্ত ভোটারের নাম, টেলিফোন নম্বারের তলিকা পাই,” বলেন বেনজীর।

তিনি বলেন, বলেন, “এই অফিসটি (সিটি সেন্টারে ইউনাইটেড করপোরেশন) দুই মাস আগে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তার আগে বড় একটি রাজনৈতিক দলের ভবনের পাশে ছিল তাদের অফিস।”

তিনি বলেন, “ইউনাইটেড করপোরেশনে আমরা অনেক ক্যাশবই ও বিভিন্ন ধরনের স্লিপ, ভাউচার পেয়েছি। তবে গত দুই মাসের চিত্রটা পুরোপুরি পেলে আমরা জানতে পারতাম, আর কাকে টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা বিষয়টি তদন্ত করব।”

গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও সন্ত্রাস দমন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।