সমাপনী পরীক্ষা আত্মবিশ্বাস বাড়ায়: প্রধানমন্ত্রী

পঞ্চম ও অষ্টমের দুই সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে বিভিন্ন মহলের আপত্তি থাকলেও এ পরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Dec 2018, 07:56 AM
Updated : 24 Dec 2018, 08:06 AM

সোমবার গণভবনে প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ হস্তান্তর এবং বই উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ দুটো পরীক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ।

“যেহেতু ক্লাস ফাইভে একটা পরীক্ষা হচ্ছে, আবার ক্লাস এইটে একটা পরীক্ষা হচ্ছে, আমি জানি, অনেকে এর বিরুদ্ধে কথা বলে। অনেকের আপত্তিও আছে- কেন এই পরীক্ষা হচ্ছে?

“এই পরীক্ষাটা হওয়ার ফলে আমাদের ছেলেমেয়েদের ভেতরে ছোট ছোট শিশুদের মাঝে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস জেগে উঠছে।… গর্বের বিষয় যে তারা সার্টিফিকেট পাচ্ছে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে এসএসসি পরীক্ষার ভয়ভীতিও চলে যায় তাদের।”

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০৯ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হয়। আর ইবতেদায়ীতে এই পরীক্ষা হচ্ছে ২০১০ সাল থেকে।

প্রথম দুই বছর বিভাগভিত্তিক ফল দেওয়া হলেও ২০১১ সাল থেকে গ্রেডিং পদ্ধতিতে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের সমাপনীর ফল দেওয়া হচ্ছে।

দেশের শিক্ষাবিদদের একটি অংশ এই দুই সমাপনী পরীক্ষার বিরোধিতা করে বলে আসছেন, এই দুটি পাবলিক পরীক্ষা শিশুদের অপ্রয়োজনীয় প্রতিযোগিতার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে, ফলাফলে যাই দেখানো হোক, শিক্ষার সার্বিক মান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও এই দুটি সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের অঙ্গীকার রেখেছে। 

এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে শেখ হাসিনা বলেন, “পরীক্ষার পর শিশুরা সার্টিফিকেট হাতে পাচ্ছে, আমি মনে করি এটা তাদের পড়ালেখায় আরও মনোযোগী করবে।”

আগে পাসের হার ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ অতিক্রম করত না- এমন তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, “এবার ৮৫ ভাগের উপরে উঠেছে। এটা যথেষ্ট আমি মনে করি, শিশুদের আরও ভালোভাবে উৎসাহিত করতে পারলে আরও ভালো ফলাফল করতে পারবে।”

পাস করা শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে অকৃতকার্যদের আরও মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করে আগামীর জন্য তৈরি হতে বলেন শেখ হাসিনা। তারা আগামীবার ভালো ফলাফলের মাধ্যমে বাবা-মায়ের মুখ উজ্জ্বল করতে পারবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে আমাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, সবাই উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করবে না, কারিগরি বা ভোকেশনাল ট্রেনিং নিতে চাইবে অনেকেই। তদের একটা সার্টিফিকেট থাকলে উপকার হয়।”

গতানুগতিক শিক্ষাগ্রহণ না করে কেউ যদি কারিগরি বিষয়ে পড়ালেখা করতে চায়, তারা এই পিএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে লাভবান হবেন বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

কওমী মাদ্রাসাকে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল ধারায় সম্পৃক্ত করার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “সকলকে নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম আমরা করতে পেরেছি।”

আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞানসম্পন্ন জাতি গড়ে তুলতে হবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার যে লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, একমাত্র শিক্ষাই পারে সে লক্ষ্য পূরণ করতে।”

শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, বিনামূল্যে বই বিতরণ, বৃত্তি-উপবৃত্তি দেওয়াসহ সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে ‘শিক্ষা গ্রহণে আগ্রহ বাড়ছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।