মঙ্গলবার জাতীয় জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচনে আদর্শের বিষয়টি ক্ষীণ হয়ে আসছে। বঙ্গবন্ধুর একটি ব্যাপার হচ্ছে যে, তিনি তার পথ থেকে কিন্তু খুব একটা বিচ্যুত হননি।
“কিন্তু বর্তমান রাজনীতি... আওয়ামী লীগ বলে তারা বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শের উত্তরাধিকারী, কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শটা কতটুকু অনুধাবন করতে পেরেছেন, সেটি নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। কারণ বঙ্গবন্ধুর লেখাগুলো মনে হয় তারা পড়েননি। পড়লে তারা ওইভাবে একটা সমঝোতাপূর্ণ অবস্থানে যেতে পারতেন না।”
তিনি বলেন, “আমাদের বর্তমানের রাজনীতিতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিষয়টি গৌণ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে ধর্মীয়ভিত্তিক রাজনীতির বিষয়টি বা ধর্মীয় আইডেনটিটির বিষয়টি মুখ্য হয়ে আছে। শেখ হাসিনার পক্ষেও ধর্মীয় আইডেনটিটি বা ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের বিষয়টি একেবারেই উপেক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না।
“শেখ হাসিনা একইসঙ্গে চার মূলনীতি নিয়ে কাজ করছেন যাচ্ছেন, আবার তার সঙ্গে ধর্মকেও রেখে দিতে হচ্ছে।”
মুনতাসীর মামুন বলেন, “আমার মনে হয়, ধর্মভিত্তিক জাতীয়তার যে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে, ধর্মের যে উপাদান সেটি আমাদের পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না। এই ধারাটিকে আমরা গৌণ করতে পারি কি-না, সেটি হবে এই দ্বন্দ্বের একটি মূল বিষয়।”
ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে ক্ষীণ করার প্রশ্নে শেখ হাসিনার পক্ষে দাঁড়াতে তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক।
“ধর্মীয় জাতীয়তাবাদকে ক্ষীণ করার প্রশ্নে শেখ হাসিনার পক্ষে যদি তরুণরা না দাঁড়ায়, তাহলে আমরা সর্বনাশের পথে অগ্রসর হব। আগে তরুণরা গ্রহণ করেনি। তরুণরা যদি এবার ভুল করে, তাহলে বাংলাদেশ যে পথে যাবে, সে পথ থেকে বাংলাদেশকে ফেরানো খুব কঠিন হবে।”
অনুষ্ঠানে ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিজয় দিবস’ শীর্ষক একক বক্তৃতা করেন জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়।
“১৯৪৮ থেকে আমাদের চূড়ান্ত বিজয় অবধি দেখা যাবে, কখনোই বঙ্গবন্ধু নিয়মতান্ত্রিক পথ থেকে একচুলও সরেননি। আর বাঙালি জাতিকে চূড়ান্ত বিজয়ে নেবার পথে প্রতিটি স্তর তিনি পার করেছেন সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে ও শতভাগ নিয়মতান্ত্রিক পথে। তাই বাঙালি জাতির বিজয়ের আন্দোলন পৃথিবীর মানুষের মুক্তির পথে অন্যতম নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন হিসাবে একটি উদাহরণ।”
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হয়েছে উল্লেখ করে স্বদেশ রায় বলেন, “এ বিজয় এতোটাই শক্তিশালী যে বিজয়ের সাড়ে তিন বছরের মধ্যে তার নায়ককে হত্যা করে উল্টো যাত্রা শুরু করা হলেও সরাসরি এই রাষ্ট্রে আর কখনোই ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের পতাকা ওড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
“বাঙালি সংস্কৃতি আর বাঙালি জাতীয়তাবাদই নানা আকার ধারণ করে এগিয়ে যাবে ভবিষ্যতের দিকে। আর সেই সুদূর ভবিষ্যতও বলবে, ১৬ ডিসেম্বর ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের চূড়ান্ত বিজয় দিবস।”