ওয়াশিংটনভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘লিবার্টি সাউথ এশিয়া’ দক্ষিণ এশিয়ায় ধর্মীয় স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার বিকাশে কাজ করে থাকে। এছাড়া বিশ্বব্যাপী গ্রাহকদের সেবা দেয় তারা।
বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন ডিসির ‘হাডসন ইনস্টিটিউট’ নামের খ্যাতনামা একটি থিঙ্কট্যাংকের উদ্যোগে ‘স্ট্যাবিলিটি, ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইসলামিজ্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় ওল্ডমিক্সন জামায়াতের বিষয়ে ওই তথ্য দেন।
তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে যারা প্রচলিত আইনের সুযোগ নিয়ে মোটা অর্থ নিচ্ছেন, তারাও জানেন না, কারা দিচ্ছে এই অর্থ এবং কী তাদের মোটিভ। আর এই লবিং ফার্মের সাথে চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশে যাতে তারা (জামাত-শিবির) নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারে সে ধরনের চাপ প্রয়োগের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।
“এজন্য এই ফার্ম কংগ্রেস এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সাথে দেন-দরবার করবে। অর্থাৎ তারা আবারো অপতৎপরতা চালাবে, কিন্তু সরকার কিছু বলতে পারবে না-এমন প্রত্যাশায় অর্থ ব্যয় করছে।”
বাংলাদেশে ২০০১ সালের নির্বাচনের পরে এবং ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনে সহিংসতায় প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে ওল্ডমিক্সন বলেন, “সে সব সময়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়। শত শত মন্দির-গির্জায় ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। নারীদের ধর্ষণ এবং হত্যার কথাও সকলেই জানি। এমনকি আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ওপরও বেশ কয়েকটি নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটেছে।”
গণফোরাম নেতা কামাল হোসেনের ভূমিকায় হতাশা প্রকাশ করেন সেথ ওল্ডমিক্সন।
তিনি বলেন, “তিনি (কামাল) নিজেই অঙ্গীকার করেছিলেন যে, বিএনপির সাথে জামায়াত থাকলে সে জোটে তিনি যাবেন না। কিন্তু বাস্তবে ঘটল তার অঙ্গীকার ভঙ্গের নগ্ন একটি ঘটনা। জামায়াতের লোকজন ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন ফ্রন্টে ২৫ আসনে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছে।
“আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনার মানুষ হিসেবে কামাল হোসেনের এ আচরণ সকলকে হতভম্ব করেছে।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র থামিয়ে দিতে জামায়াতে ইসলামী নানা অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। ওদেরকে শক্ত হাতে প্রতিহত করতে সকলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া উচিত। আসন্ন নির্বাচনেও ওরা নাশকতার মতো ভয়ঙ্কর কাজ করতে পারে।”
হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের এই রিপাবলিকান সদস্য সম্প্রতি আরেক ডেমোক্রেট সদস্যকে নিয়ে কংগ্রেসে বাংলাদেশ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব তোলেন, যেখানে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ধর্মীয় দল ও সংগঠনকে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের জন্যে হুমকি আখ্যায়িত করা হয়।
হাডসন ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো এবং দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক পরিচালক হুসাইন হাক্কানীর সঞ্চালনায় এ আলোচনায় আরো অংশ নেন মধ্যপ্রাচ্য ফোরামের ইসলামিস্ট ওয়াচের পরিচালক স্যাম ওয়েস্ট্রপ এবং সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রকল্পের বিশ্লেষক আভা শঙ্কর ।
কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাঙ্কস বলেন, “বাংলাদেশ এগিয়ে চলছে, এশিয়ায় অর্থনৈতিক সাফল্যের শীর্ষে উঠেছে। একইসাথে রাজনৈতিকভাবেও বহুমুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। বিশেষ করে, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের এই উন্নয়ন আর গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। গণতন্ত্র থাকলে ওদের ধর্ম-ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে আশঙ্কায় সামনের নির্বাচনেও ভোটারের মধ্যে অশান্তি তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। বাংলাদেশের স্বার্থেই শুধু নয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থেই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া জরুরি।”
এই কংগ্রেসম্যান বলেন, “বাংলাদেশের আপামর মানুষেরই প্রত্যাশা, সুষ্ঠু পরিবেশে ভালো একটি নির্বাচন। যুক্তরাষ্ট্রও তাই চায়। বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাক-এটিও যুক্তরাষ্ট্রের একান্তই চাওয়া। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর মতো কিছু চরমপন্থি বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনের জন্যে বড় একটি হুমকি বলে মনে হচ্ছে।”
তিনি বলেন, ইকনার প্রধান কার্যালয় নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকায়, যেখানে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড নিয়ে পলাতক আশরাফুজ্জামান বাস করছেন। আর মূনা (মুসলিম উম্মাহ ইন নর্থ আমেরিকা) প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিনে।
“এটি পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে একাত্তরের ঘাতক হিসেবে ফাঁসি কার্যকর হওয়া আল বদর নেতা মীর কাসেম আলীর ভাই মীর মাসুম আলীর ওপর।”
ইনস্টিটিউটের স্টার্ন কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিত পৌনে দুই ঘণ্টার এ আলোচনায় স্যাম ওয়েস্ট্রপ বলেন, “একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় বেছে বেছে মেধাবী বাঙালিদের হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দেওয়া আল বদর চৌধুরী মঈনুদ্দিন লন্ডনে বসতি গড়ে সৃষ্টি করেছেন ‘মুসলিম কাউন্সিল’। আরেক আল বদর আশরাফুজ্জামান খান নিউ ইয়র্কে বসতি গড়ে সৃষ্টি করেছেন ইকনা। সেবামূলক এ দুটি সংস্থার মাধ্যমে মূলত জামাত-শিবিরের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডই চালানো হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক দুটি রাষ্ট্রে।”
যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামাতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর এক ছেলে নর্থ ক্যারোলিনায় বসবাস করছেন জানিয়ে স্যাম ওয়েস্ট্রপ বলেন, “তিনিসহ আরো অনেকেই ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা, পেনসিলভেনিয়া, নিউ জার্সি, নিউ ইয়র্ক, মিশিগান, শিকাগো, ভার্জিনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে জামাত-শিবিরের মতবাদ প্রচার করছেন। অর্থ ব্যয়ে তারা মার্কিন রাজনীতিকদের বিভ্রান্তিকর তথ্য দিচ্ছেন।
“মার্কিন মিডিয়াতেও বর্তমান প্রগতিশীল সরকারের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বিদ্যমান আইনের সুযোগ নিয়ে তারা এই ভূখণ্ডের নীতি-আদর্শের পরিপন্থি কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন অত্যন্ত কৌশলে।”
ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তাও ছিলেন এ আলোচনায়। এ আলোচনার আয়োজন করায় হাডসন ইনস্টিটিউটকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সেক্রেটারি মো. আব্দুল কাদের মিয়া।