মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের রুখতে তরুণদের প্রতি ঢাবি উপাচার্যের আহ্বান

জাতীয় নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে তরুণদের আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান।   

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2018, 06:27 PM
Updated : 14 Dec 2018, 06:29 PM

শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে বুদ্ধিজীবী দিবসের আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তিনি।

আখতারুজ্জামান বলেন, “এ বছর বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর। কেননা এ বছরের বিজয়ের মাসে আমাদের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এবং শহীদ পরিবারের সদস্য তারা দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছেন যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার ছিল, তারাই এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে।”

আসন্ন নির্বাচনে একাত্তরের স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির উত্থান প্রচেষ্টাকে ‘পুরোনো বোতলে নতুন মদ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এই অপশক্তিকে রুখে দিতে নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানিয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, “যারা পাকিস্তানের দোসর ছিল তারা এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী রাজনৈতিক দলের হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এ বছর ভিন্ন অবয়বে, ভিন্ন ছত্রছায়ায় তাদের উত্থান ঘটেছে। আমাদের নতুন প্রজন্ম এ সকল দোসরদের উত্থানের অপচেষ্টাকে প্রতিহত করবে।”

বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে তিনি বলেন, “এদেশকে মেধাশূন্য করার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করেছিলেন পাকিস্তানের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের প্রধান রাও ফরমান আলী। তিনি জানতেন বাঙালিদের মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করেছেন এ সকল বুদ্ধিজীবীরা।

“এজন্য ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে টার্গেট করা হয়। এ পরিকল্পনার চূড়ান্ত বাস্তবায়ন করা হয় ১৪ ডিসেম্বর।  তারা এদেশেরই কিছু মানুষকে ব্যবহার করে এ হত্যাকাণ্ড পরিচালনা করে। তাদের বিভিন্ন দল-উপদলে অর্ন্তভুক্ত করে দেশকে মেধাশূন্য করার এ ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র করেছে।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এই অধ্যাপক বলেন, “বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনমত গঠন করেছিলেন। সমাজের নানা বৈষম্য, অন্যায় ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা সোচ্চার ছিলেন। মানুষের মনোজগতের উন্নয়নে তারা কাজ করছিলেন।”

যুদ্ধাপরাধী এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ যারা দেখেছেন তাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধ একটি বাস্তবতা। আর যারা দেখেনি তাদের কাছে এটি গল্পকাহিনী মাত্র। এজন্য নতুন প্রজম্মকে মুক্তিযুদ্ধের বাস্তবতা উপলব্ধি করার জন্য তাদের চিন্তন শক্তির উন্নতি করতে হবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামানের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. তাজিন আজিজ চৌধুরী, শহীদ গিয়াস উদ্দিন আহমেদের বোন অধ্যাপক সাজেদা বানু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ পরিবার সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  মুক্তিযোদ্ধা প্রাতিষ্ঠানিক ইউনিট কমান্ড, অফিসার্স এসোসিয়েশন, তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী সমিতি, কারিগরি কর্মচারী সমিতি এবং চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। কর্মসূচির মধ্যে ছিল উপাচার্য ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান, জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আলোচনা সভা।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়।

১৪ ডিসেম্বর প্রথম প্রহরে ফজলুল হক মুসলিম হলে আলোক শিখা প্রজ্বালন করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উপাচার্য আখতারুজ্জামান।