স্বাধীনতাবিরোধীদের মূলোৎপাটনের প্রত্যয় বুদ্ধিজীবী দিবসে

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রায়েরবাজার বধ্যভূমির শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে জাতির মেধাবী সন্তানদের শ্রদ্ধা জানিয়েছে সব শ্রেণি পেশার মানুষ, তাদের কথায় এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মূলোৎপাটনের প্রত্যয়। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2018, 03:17 PM
Updated : 14 Dec 2018, 03:17 PM

একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী তাদের এদেশীয় দোসরদের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে।

শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজেদের পরাজয় নিশ্চিত জেনেই পাকিস্তানি বাহিনী ওই নিধনযজ্ঞ চালায়; তাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতার পর যেন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে- তা নিশ্চিত করা।

একাত্তরের সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে শুক্রবার সকাল থেকেই সব বয়সের সব শ্রেণি পেশার মানুষ মিরপুর আর রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জড়ো হতে থাকেন লাল-সবুজ পতাকা আর শ্রদ্ধার ফুল হাতে।

রায়েরবাজার বধ্যভূমি সৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানানোর পর থিয়েটার আন্দোলন কর্মী লিয়াকত আলী লাকী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরাজয় যখন নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল, তখন স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি রাজাকার- আলবদর গোষ্ঠী এই ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। এরাই পঁচাত্তর সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী। জাতির ইতিহাস থেকে মুক্তিযুদ্ধকে মুছে ফেলার দীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে তারা এগোচ্ছিল এবং একটা সময় পর্যন্ত তারা খানিকটা সফলও হয়েছিল।”

দেশের রাজনীতি ও প্রশাসনে এই স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে, জাতির পিতা হত্যার বিচার হয়েছে; কিন্তু এখনো দেশের রাজনীতি, প্রশাসনসহ দেশ পরিচালনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে এই স্বাধীনতাবিরোধী, পাকিস্তানের দোসররা আছে; তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।”

রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে লিয়াকত বলেন, “আমরা মনে করি, এখন সময় এসেছে তাদের মূলোৎপাটন করার।” 

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে সস্ত্রীক রায়েরবাজার স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী অখিল কুমার দেব।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে যেসব বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছেন, তারা ছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। জাতিকে মেধাশূন্য করার জন্য পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসররা এই ঘৃণ্য কাজ করেছিল। যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।”

আক্ষেপ করে অখিল বলেন, “সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, হানাদার বাহিনীর সেইসব দোসররা এখনো এই দেশের মাটিতে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।”

নবীন প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চাকে উৎসাহিত করতে কাজ করছে ‘তারুণ্য ৭১’। এ সংগঠনের সদস্য আবু সাঈদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে এই ধরনের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড খুব বেশি দেখা যায়নি। আমরা ১৪ ডিসেম্বরের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চাই। এই লক্ষ্যে আমরা দেশব্যাপী ক্যাম্পেইন করছি।”

আবু সাঈদ বলেন, সারাদেশে গণকবর ও বধ্যভূমির সংখ্যা পাঁচশর মত। কিন্তু বিস্তারিত তথ্য হাতে নেই। প্রাথমিকভাবে তারুণ্য ৭১ এসব গণকবর ও বধ্যভূমির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছে।

দ্বিতীয় শ্রেণি পড়ুয়া দীপজ্যোতিকে নিয়ে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এসেছিলেন ব্যবসায়ী প্রহ্লাদ সরকার।  

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “প্রতিবছর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে আমি এখানে আসি। এবার ছেলেকে নিয়ে আসার উদ্দেশ্য হল, আমরা যে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষা ও কষ্টের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছি, এটা তাকে প্র্যাকটিক্যালি জানানো।”

নতুন প্রজন্মকে একাত্তর এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্পর্কে জানানোর ওপর গুরুত্ব দেন প্রহ্লাদ সরকার।

তিনি বলেন, “ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, ১৯৭১ সালে যেসব বুদ্ধিজীবী শহীদ হয়েছিলেন, তাদের বিষয়ে শিশু-কিশোরদের ধারণা দেওয়ার জন্য সরকারের আরও ব্যাপক কর্মসূচি নেওয়া প্রয়োজন।”