ফিরে এল বাংলাদেশের ইতিহাসের বিষাদময় দিন

স্বাধীনতার উষালগ্নে জাতির সূর্যসন্তানদের হারানোর বিষাদময় দিনটি পালনের প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Dec 2018, 07:02 PM
Updated : 13 Dec 2018, 07:02 PM

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের শেষ ভাগে এদেশের দোসরদের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনী হত্যা করেছিল শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিকসহ হাজারো বুদ্ধিজীবীকে।

সেই থেকে ১৪ ডিসেম্বরকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে, পালন করে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে।

সেই অপরাধে দায়ী এদেশীয়দের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলিয়েছে বাংলাদেশ। কলঙ্ক মোচনের পথে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ এখন গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতেও দাবি তুলেছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামোডালে এবার শুক্রবার শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হবে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে।

ভোটের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী ও তাদের দোসরদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

গোপালগঞ্জে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, অগ্নিসংযোগকারী ও তাদের দোসরদের ভোটের মাধ্যমে উপযুক্ত জবাব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের নকশাকারদের দল জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হলেও নির্বাচনের মাঠে রয়েছে তাদের নেতারা। দলটির ২৫ নেতা এবার নির্বাচনে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে নিশ্চিত পরাজয় আঁচ করতে পেরে জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশ্যে স্বাধীনতাবিরোধীরা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল।

“একাত্তরে বুদ্ধিজীবীরা তাদের ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি, যুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারকে পরামর্শ প্রদানসহ বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে সাফল্যের পথে এগিয়ে নিতে বিপুল অবদান রেখেছিলেন।”

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ও পথকে অনুসরণ করে অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক সমাজ গড়তে পারলেই তাদের আত্মত্যাগ ‘সার্থক’ হবে মনে করেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেছেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে নামে। তারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।

“স্বাধীনতা বিরোধীরা এই পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্যদিয়ে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়। বাংলাদেশ যাতে আর কখনও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সেটাই ছিল এ হত্যাযজ্ঞের মূল লক্ষ্য।”

শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তমনা, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের  উপর নানা অত্যাচার-নির্যাতনের এই শক্তি দেশে ‘জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের জন্ম দেয়’।

“তারা সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়। খুন-হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন চালায়। এই সন্ত্রাসী-জঙ্গিগোষ্ঠী ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বানচাল করতে দেশব্যাপী আগুন সন্ত্রাস চালায়।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় এনেছি। কোনো ষড়যন্ত্রই জাতিকে এ পথ থেকে বিচ্যুত করতে পারবে না। এই কুখ্যাত মানবতাবিরোধীদের যারা রক্ষার চেষ্টা করছে, তাদেরও একদিন বিচার হবে।”

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শুক্রবার সকাল ৭টায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দেবেন।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে শহীদ পরিবারের সদস্যরা ও মুক্তিযোদ্ধারাও সকালে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।

সকাল সাড়ে ৮টায় সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে এদিন বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য টিভি চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে রয়েছে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের পবিত্রতা রক্ষায় অনুষ্ঠান স্থলে মাইক বা লাউডস্পিকার ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।