ঢাকার তিন নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মনির কামাল বুধবার এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত ২০ জনের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে রায়ে। এ মামলার ২৬ আসামির মধ্যে ছয়জনকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে কারাগারে থাকা দীপু ওরফে টিপু বিশ্বাস এবং জামিনে থাকা সিরাজ সিকদার, আশরাফ শরীফ, মোশারফ শেখ, বজলু আকন, আজাদ মোল্লা, শওকত মোল্লা ওরফে সাগু মেম্বার এবং দবির মোল্লা রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
আর জসীম শেখ, নাসিম শেখ, মজনু মাতুব্বর, উজ্জ্বল হাওলাদার, জাফর মাতুব্বর, কুব্বাস মাতুব্বর, দাদন ফকির, আমির হোসেন শেখ, ফয়েজ শেখ, হেমায়েত মোল্লা, সুমন বাঘা ও আলিম আকন পলাতক।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, “দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন করে কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় পুলিশ ভূমিকা রাখে। তারা জরুরি সেবা দেয়, জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের সেতুবন্ধ তৈরি করে। অথচ সর্বহারা নামের এই উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসীরা পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা জন্য এই বিচার করেছি।”
অপরাধে সংশ্লিষ্টতা ‘সন্দেহাতীতভাবে’ প্রমাণিত না হওয়ায় মাসুদ সিকদার ,হেলাল সিকদার, শাহাদত আকন, মোতালেব মাতুব্বর ওরফে মতলেব মেম্বার, নূরুল ইসলাম ওরফে আসলাম ওরফে বাবু ও মোশারফ হোসেন মোল্লা চেয়ারম্যানকে খালাস দেন বিচারক।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৫ সালের ৩ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে রাজৈরের পূর্ব শাখারপাড় মোড়ে এসবির এসআই হাসনাইন আজম খান এবং প্রধান অফিস সহকারী মো. কামরুল আলম খান ঠাকুরের মোটর সাইকেল আটকায় সর্বহারা পার্টির সদস্যরা। পরে তাদের হত্যা করে টুকরো টুকরো লাশ কুমার নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।
আজম খান ও কামরুল আলম কার্যালয়ে দুই দিন অনুপস্থিত থাকায় এবং তাদের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় মাদারীপুর জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার তৎকালীন পরির্দশক আবুল খায়ের মিয়া রাজৈর থানায় মামলা করেন।
পর্যায়ক্রমে চারজন কর্মকর্তা মামলাটির তদন্ত করেন। শেষ পর্যন্ত রাজৈর থানার পুলিশ পরিদর্শক একরাম আলী মোল্লা ২০০৭ সালের ৬ অগাস্ট ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত ৩২ আসামির মধ্যে চারজন বিভিন্ন সময় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এছাড়া আরো দুইজন মারা যান অসুস্থ হয়ে।
আদালতে আসামিদের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে জানা যায়, আজম খান ও কামরুল আলম পুলিশের পরিচয় দেওয়ার পর তাদের মোটরসাইকেল থেকে নামিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। এরপর তাদের মোটরসাইকেলসহ কুমার নদীর দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
ট্রলারে উঠিয়ে প্রথমে মোটরসাইকেল নদীতে ফেলে দেয় আসামিরা। কামরুলের গলা কেটে তার মাথা হাসনাইনের হাতে দেওয়া হয়। কামরুলের লাশ টুকরা টুকরা করে নদীতে ছিটাতে ছিটাতে ট্রলারে এগিয়ে যায়। এরপর হাসনাইনকেও একইভাবে হত্যা করে তার লাশও টুকরা টুকরা করে নদীতে ফেলা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌঁসুলি মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মামলাটির নথিপত্র ২০০৮ সালে মাদারীপুরের আদালত থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর হয়।
কিন্তু দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল নির্দিষ্ট সময়ে মামলার নিষ্পত্তি না হলে নথিপত্র মাদারীপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফেরত পাঠানো হয়। পরে আবারও মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসে। হাই কোর্টের আদেশেও বেশ কিছুদিন মামলাটির বিচার স্থগিত থাকে।
১৩ বছর পর রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩৬ জনের সাক্ষ্য শুনে বিচারক বুধবার রায় ঘোষণা করলেন।