ভিকারুননিসা মেরামতে ‘অনেক পদক্ষেপ’ আসছে

এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ নিয়ে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2018, 11:06 AM
Updated : 9 Dec 2018, 12:01 PM

সচিবালয়ে রোববার এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন এ তথ্য জানান।

ভিকারুননিসার পাকিস্তানি আমলের নাম পরিবর্তন করা হবে কি না- সেই প্রশ্নে সচিব বলেন, “আমি আপনাদের আগেই বলেছি আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নেব। যতোগুলো প্রশ্ন এসেছে, যতোগুলো অভিযোগ এসেছে, ইতোমধ্যে মাননীয় আদালত একটা কমিটি করে দিয়েছেন, আমরাও কমিটি করেছি। আমরাও পরিদর্শন করব, বিভিন্নভাবে চেষ্টা করব।

“যেসব অভিযোগ অভিভাবকেরা করছেন, শিক্ষার্থীরা করছেন, আপনারা করছেন, সেগুলো থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমরা এ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি এবং আরও নিতে থাকব যাতে একটা আদর্শ প্রতিষ্ঠান হয়।”

ঢাকার নামি এই স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ কীভাবে কার্যকর থাকবে, শিক্ষকরা কীভাবে পরিচালতি হবেন, শিক্ষার্থীরা কীভাবে ভালো থাকতে পারবে, ফলাফলও ভালো হবে- সে রকম কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানান সচিব।

রোববার সাকলেও ভিকারুননিসা নিয়ে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “যাতে প্রতিষ্ঠানটি ভালোভাবে চলে, শিক্ষক, অভিভাবকদের সন্তুষ্টি থাকে, যাতে শিক্ষকদের মর্যাদা অক্ষুণ্ন থাকে, শিক্ষার্থীরা প্রকৃত নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে পারে সেজন্য আমাদের সকল প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।”

নবম শ্রেণির ছাত্রী অরিত্রী অধিকারী গত ৩ ডিসেম্বর শান্তিনগরের বাসায় আত্মহত্যা করার পর থেকে উত্তেজনা চলছে রাজধানীর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরে।

পরিবারের অভিযোগ, পরীক্ষার সময় অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পাওয়ার পর তার বাবা-মাকে ডেকে নিয়ে ‘অপমান করেছিলেন’ অধ্যক্ষ। সে কারণে ওই কিশোরী আত্মহত্যা করে।

তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, অরিত্রী বার্ষিক পরীক্ষায় মোবাইল ফোনে নকলসহ ধরা পড়েছিলেন।

অরিত্রীর মৃত্যুর পর টানা তিন দিন স্কুলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে একদল শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।

এই আন্দোলনের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তদন্তে অরিত্রীর আত্মহত্যায় ‘প্ররোচনার’ জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস, প্রভাতি শাখার প্রধান জিনাত আখতার ও শ্রেণি শিক্ষক হাসনা হেনাকে চিহ্নিত করা হলে তাদের বরখাস্ত ও এমপিও বাতিল করা হয়।

পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পুলিশ ও র‌্যাবকে চিঠি দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই রাতেই গ্রেপ্তার হন হাসনা হেনা, যার মুক্তির দাবিতে শিক্ষার্থীদের আরেকটি দল গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করছে। 

মামলার প্রেক্ষিতেই মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিয়েছে জানিয়ে সচিব সোহরাব বলেন, “আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এটুকু বলতে পারি যিনি যা প্রাপ্য নন তিনি যেন তা না পান সেজন্য আমরা সচেষ্ট আছি। কোনো অবস্থাতেই যাতে কেউ অন্যায়ভাবে পরিস্থিতির শিকার না হন, সে চেষ্টাও করছি।”

প্রত্যেকেরই আদালতে যাওয়ার অধিকার আছে মন্তব্য করে সচিব বলেন, যিনি গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি আদালতে তার বক্তব্য রাখতে পারেন, আদালত সিদ্ধান্ত দেবে।

ভিকারুননিসায় ভবিষ্যতে যেন অবৈধভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি না হতে পারে সেজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান সচিব সোহরাব।

১৯৫২ সালের ১৪ জানুয়ারি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ফিরোজ খান নূনের স্ত্রী ভিকারুননিসা নূনের উদ্যোগে ঢাকার বেইলি রোডে যাত্রা শুরু করে এ বিদ্যালয়।

বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার ধারাবাহিকভাবে ঈর্ষণীয় ফলাফল দেখিয়ে আসা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নানা অনিয়মের বিষয়ে অভিভাবকরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন অরিত্রির মৃত্যুর পর। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের ভাষায়, ‘থলের বিড়াল’ বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে।

প্রতিষ্ঠানটিতে প্রভাবশালীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে সচিব বলেন, “আমি আপনাদের নিশ্চিত করে বলতে পারি আমি, আমার মন্ত্রী বা আমার বিভাগ, এমনকি মাউশি কখনও কোনো ভর্তির তদবির করেনি, চাকরি তো দূরের কথা।

“শিক্ষক নিয়োগ আমরা করি না, এটি একটি প্রাইভেট স্কুল, সেখানে একটা ম্যানেজিং কমিটি আছে। তারা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন, তারাই সে কাজটি করেন। বাট এখন যে প্রমাণগুলো আসছে, ওটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।”