অধিকার আদায় করতে গিয়ে যেন অশান্তি না হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারীদেরকে তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হবে; তবে তা করতে গিয়ে যেন পরিবারে কোনো অশান্তি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2018, 07:53 AM
Updated : 9 Dec 2018, 10:02 AM

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোববার বেগম রোকেয়া দিবস ও বেগম রোকেয়া পদক-২০১৮ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।

এ বছর নারীর ক্ষমতায়নে অবদান রাখায় অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট পাঁচজনকে বেগম রোকেয়া পদক দেওয়া হয়।

পদকপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- সাবেক প্রতিমন্ত্রী জেবুন্নেসা তালুকদার, কুমিল্লা মহিলা কলেজের সাবেক শিক্ষয়িত্রী অধ্যাপক জোহরা আনিস, সুনামগঞ্জের বিশিষ্ট সমাজ ও সাংস্কৃতিক কর্মী শিলা চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখিকা এবং সমাজকর্মী রমা চৌধুরী এবং ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার লেখিকা ও সমাজকর্মী রোকেয়া বেগম।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলে গেছেন, ‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করবার কেন নাহি দেবে অধিকার হে বিধাতা’। এই কান্না আমরা কাঁদতে চাই না। অধিকার আদায় করে নিতে হয়। অধিকার অর্জন করে নিতে হয়। সাথে সাথে এইটুকু বলব অধিকার আদায় করতে গিয়ে সংসারে যেন ঝামেলা না হয়, অশান্তি না হয়। সেটাও দেখতে হবে।

“এখানে সবারই একটা দায়িত্ব থাকবে। পরিবারেরও দায়িত্ব আছে। সমাজের প্রতিও দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্বটা থাকতে হবে। পরিমিতিবোধটা থাকতে হবে। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিমিতিবোধ, সেটা আমি মনে করি।”

কেউ কাউকে জায়গা দেয় না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “জায়গা করে দিতে হবে, সুযোগ করে দিতে হবে আর সুযোগের সদ্ব্যবহারটাও করতে হবে।”

নারীরা দেশের উন্নয়নে নিজেদের অবস্থান তৈরি করে সবক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ভূমিকা তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেমন সংগ্রম করেছেন তার পাশে থেকে সাহস যুগিয়েছিলেন আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। তিনি তার জীবনে যেই মহান আত্মত্যাগ করেছিলেন, তার সন্তান হিসেবে আমি তা জানি। তাই আজকের দিনে তাকে বারবার মনে পড়ছে।

“আব্বা থাকতেন কারাগারে বন্দি। মা একদিকে যেমন আমাদের সব ভাই বোনদের মানুষ করেছেন, আত্মীয় স্বজন বা পার্টির কেউ যদি অসুস্থ হত তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা বা তাদের দেখা, যারা জেলে যেত প্রত্যেকটা পরিবারকে তিনি নিজে সহযোগিতা করতেন। পাশাপাশি দলকে সংগঠিত করা, আন্দোলন গড়ে তোলা এবং আব্বার জন্য মামলা মোকাদ্দমা। একটার পর একটা তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হত সেগুলোও একাধারে দেখার কাজ তিনি করে যেতেন।”

ছবি: পিআইডি

শেখ হাসিনা বলেন, “মাঝে মাঝে ভাবি কিভাবে তিনি এতকিছু করতেন। আমার বাবার রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন উপযুক্ত সাথি। যিনি সব সময় পাশে থেকে প্রেরণা জুগিয়েছেন। তিনি কোনোদিন বলতেন না যে সমাজে সংসারে কোনো অভাব অনটন বা কোনো অসুবিধার কথা নিয়ে মাকে কোনোদিন অভিযোগ করতে শুনি নাই। শুধু বলতেন তুমি তোমার কাজ করে যাও। ঘর সংসার নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।

“এই যে পাশে থেকে প্রেরণা দেওয়া, যার কারণে আমরা স্বাধীন জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছি। সেই ৭ মার্চের ভাষণ, কতজন কত কথা বলেছে, শুধু মা বলেছে তোমার মনে যা আছে সেটাই তুমি বলবা। কারো কথা শোনার দরকার নাই।”

নারীদের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না হলে মেয়েদের কোনো স্থান সমাজে ও সরকারে থাকে না। এটাই প্রকৃত বাস্তবতা। সেটার দিকে নজর রেখে চাকরি থেকে শুরু করে নারীদের জন্য সরকার সব ধরনের সুযোগ করে দিয়েছে।”

বেগম রোকেয়ার অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, “আমরা নারী সমাজকে আজকে যতটুকু প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি তার পথ দেখিয়েছিলেন বেগম রোকেয়া। একটা অন্ধকার যুগ ছিল যখন মেয়েদের লেখাপড়া শেখা নিষিদ্ধ ছিল। সেই অচলায়তন ভেদ করেছিলেন বেগম রোকেয়া। তিনি লেখাপড়া শিখেছিলেন এবং তার স্বামী তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। তার স্বপ্ন আমরা বৃথা যেতে দেইনি আর দেবও না।”

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম উপস্থিত ছিলেন।