তিন শিক্ষার্থীকে ঢাবি হল থেকে বের করে দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

সিনিয়রদের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে তিন শিক্ষার্থীকে বের করে দিয়েছেন ছাত্রলীগের এক সাবেক নেতা, যিনি নিজেই হলে আছেন অবৈধভাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2018, 07:27 AM
Updated : 9 Dec 2018, 10:47 AM

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই খালিদ হাসান রবিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত রবিন ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হলেও এখনো স্যার এ এফ রহমান হলের অন্তর্ভুক্ত শাহনেওয়াজ ভবনে থাকছেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষে গ্রাফিতি আঁকতে না যাওয়ায় শুক্রবার রাতে তিনি গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ইমরান হাসান, আশিক মিয়া ও মেহেদী হাসানকে ‘গালিগালাজ করে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে’ হল থেকে বের করে দেন।

একরাত বাইরে থাকার পর শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের হস্তক্ষেপের পর হলে উঠতে পারেন এই তিন শিক্ষার্থী।

মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রবিন ভাই বৃহস্পতিবার আমাদের গ্রাফিতি আঁকতে যেতে বলেছিলেন। না যেতে পারায় উনি বকাঝকা করেছিলেন। শুক্রবার রাতে উনি আবার চিল্লাইতে চিল্লাইতে রুমে আসলেন। উনার সাথে ছিলেন আদম আব্দুল্লাহ জিম।

“আমি তখন আধো ঘুমে ছিলাম। দেখি উনি ইমরানকে কলার ধরে ধাক্কা দিয়ে বাইর করতেছেন। আমি পিছনে দাঁড়ায়ে ছিলাম। আমারেও ঘারে ধরে বাইর করে দিসে। আমি একটা হাফপ্যান্ট আর টি-শার্ট পরা ছিলাম। জুতাও পরতে দেন নাই আমাকে। এরপর আমাদেরকে হলের গেটে এনে বাইর করে দিছে।"

মেহেদী বলেন, "আমাদের ব্যক্তিগত কিছু কাজ থাকায় আর পরীক্ষা থাকায় আমরা গ্রাফিতি আঁকতে যেতে পারিনি। ছাত্রলীগের সব গ্রাফিতি আমরাই আঁকি। এর আগে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, সম্মেলনে বিভিন্ন গ্রাফিক্সের কাজ আমরা তিন বন্ধু করেছি।”

ছাত্রলীগ নেতা রবিন নিজেও ওই তিন শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "ওরা সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করছে। তাই ওদেরকে হল থেকে দুই তিন দিন বাইরে থাকতে বলা হয়েছে।”

কেন বাইরে থাকতে বলা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যদি আমার একজন সিনিয়র আমাকে একটা জিনিস অনেকবার বলে, পায়ে ধরার মত করে বলে, ভাইয়া একটু আসো, একটা কাজ করো; এখানে সে বলতে পারে ভাইয়া আমার এই কাজটা আছে আমি যেতে পারব না। কিন্তু তখন আমি যদি সেই সিনিয়রের সাথে বেয়াদবি করি তখন সেই সিনিয়র না হলেও আশেপাশে যারা আছে তারা এটা নিয়ে রিঅ্যাক্ট করবেই।"

হল থেকে কোনো শিক্ষার্থীকে বের করে দেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “রাইটের কথা বলতে গেলে… হলে যে ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারে স্টুডেন্ট উঠে, ওদের কি হলের থাকার রাইট আছে?"

তিনজনকে বের করে দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে চারুকলা অনুষদের ছাত্রদের আবাসিক হোস্টেল শাহনেওয়াজ ভবনের ওয়ার্ডেন আবদুস সাত্তার তৌফিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমাকে এখনো এ বিষয়ে কেউ কিছু জানায়নি। কোনো স্টুডেন্ট আমার কাছে কমপ্লেইনও করেনি। আমি খোঁজ নেব এখন।"

খালিদ হাসান রবিন কীভাবে হলে আছেন জানতে চাইলে ওয়ার্ডেন বলেন, “ওর ছাত্রত্ব নিয়ে সমস্যা আছে। স্টুডেন্টশিপ থাকার কথা না ওর। আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছি, ওকে ওয়ার্নিং দিয়ে আসছি। তারপরেও সে থাকছে।"

অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে ওদেরকে হলে ওঠানোর ব্যবস্থা করছি। আর যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তার ছাত্রত্ব নেই, সে হলে কীভাবে থাকে সেটা আমি ওই হলের ওয়ার্ডেনকে জানিয়েছি।”

রবিন ছাত্রলীগের ‘নাম ভাঙিয়ে’ ওই ঘটনা ঘটিয়েছে- এমন মন্তব্য করে সাদ্দাম বলেন, “চারুকলার কোনো বিষয় হলে সেটা আমাদের চারুকলা ছাত্রলীগের কমিটি আছে, তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সে বর্তমান  কমিটির কেউ না।  আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলব এধরনের কোন ঘটনা যদি ঘটে, তার বিরুদ্ধে যেন প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়।"