শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘আসন্ন জাতীয় নির্বাচন: ধর্মীয় সম্প্রদায়ের করণীয়’ বিষয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি একথা বলেন।
‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ আয়োজিত এ সভায় লেখক, অধ্যাপক, ধর্মীয় নেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী ও সাংবাদিকরা অংশ নেন।
অধ্যাপক আনোয়ার বলেন, “আসছে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যে তথাকথিত জাতীয় ঐক্যফন্ট গঠন করা হয়েছে, এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বাধীনতাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক জামায়াতে ইসলামীকে পুনর্বাসন করা।”
জামায়াতে ইসলামী এই ফ্রন্টে সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে রয়েছে বলে মনে করেন জাসদ নেতা আনোয়ার হোসেন।
“ধর্মনিরপেক্ষ, সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাইলে বিএনপি-জামায়াত, কামাল হোসেন গংদের পরাজিত করতে হবে। সম্প্রীতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”
আলোচনায় তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে আরও অনেকেই রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার বন্ধে আইন প্রণয়নের পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তোলেন।
এছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে-পরে সাম্প্রদায়িক হামলা, উন্মাদনা, উসকানি প্রতিরোধে দেশের সব সম্প্রদায়ের মানুষের পাশাপশি তরুণ ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে ভোট দিয়ে দেশকে মুক্তিযুদ্ধের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।”
তিনি বলেন, “দেশে অর্থনৈতিক, সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন ঘটলেও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে এখনও আমরা কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন ঘটাতে পারিনি। কিন্তু এটাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কারণ সাংস্কৃতিক উন্নয়ন না ঘটলে অর্থনৈতিক-সামাজিক উন্নয়ন টেকসই হবে না।”
জাতীয় নির্বাচনে জামায়াত ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের বর্জনের আহ্বান জানিয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব ঝুনা চৌধুরী বলেন, “মাহমুদুর রহমান মান্না, আ স ম আব্দুর রব, কাদের সিদ্দিকীরা বিএনপি-জামায়াতের সাথে ঐক্য করে প্রমাণ করেছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা সব সময় মুক্তিযোদ্ধা না।
“তারা জানেন না, এ নির্বাচনে জয়ী হলে দেশের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। আসলে তারা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে এনে প্রধানমন্ত্রী বানাতে চান। কিন্তু দেশের সচেতন ভোটাররা তাদের সেই অভীপ্সাকে কখনোই সমর্থন দেবে না।”
নির্বাচনের আগে-পরে সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে সাবেক সেনা কর্মকর্তা এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, “দেশকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে রাখতে চাইলে, গণতান্ত্রিক ধারায় রাখতে চাইলে, তরুণদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত রাখতে চাইলে রাষ্ট্রকে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।”
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর কথা বলে ড. কামাল হোসেনরা জাতিকে ধোঁকা দিচ্ছে। জামায়াতকে সাথে নিয়ে যারা স্বাধীনতার কথা বলে, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর কথা বলে তারা প্রতারক, ভণ্ড। আমাদের তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক করতে হবে।”
ভারতের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই অস্ত্র ও টাকা ঢালছে। জামায়াত-বিএনপি উন্মত্ত হয়ে উঠবে। এদের টার্গেট হবে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। প্রতিটি মুহূর্ত সজাগ ও সতর্ক থেকে তা প্রতিরোধ করতে হবে আমাদের।”
“এবার বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কোনো অপপ্রচার যেন চালাতে না পারে। সাম্প্রদায়িক হামলা বা সহিংসতার কোনো ক্ষেত্র যেন প্রস্তুত করতে পারে।”
গোলটেবিল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্দ আফজাল, বিশপ পল এস সরকার, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ভীক্ষু সুনন্দপ্রিয়, রামকৃষ্ণ মিশনের মৃদুল মহারাজ, জন্মাষ্ঠমী পষিদের সভাপতি গৌরাঙ্গ দে, কবি আসাদ মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষহ বিমান বড়ুয়া, অসীম কুমার বিশ্বাস, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিল্টন বিশ্বাস, সাংবাদিক বরুণ ভৌমিক, বঙ্গবন্ধু পরিষদের মতিউর রহমান লাল্টুসহ আরও অনেকে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুভাষ সিংহ রায়।