ঢাবি শিক্ষক সমিতি নির্বাচনে আওয়ামীপন্থিদের নিরঙ্কুশ জয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কর্তৃত্ব ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ সমর্থক শিক্ষকদের নীল দল; সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ কার্যকরী পরিষদের ১৫টি পদের ১৪টি জিতে নিয়েছে তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2018, 01:00 PM
Updated : 4 Dec 2018, 01:36 PM

সমিতির সভাপতি পদে টানা তিন মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছেন দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। সাধারণ সম্পাদক পদে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনসুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন।

বিএনপি-জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের সাদা দল কার্যকরী পরিষদের একটি মাত্র সদস্য পদে জয় পেয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাব ভবনে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট দেন সমিতির সদস্যরা।

গণনার পর বিকাল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে ফল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনার রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী।

তিনি জানান, সমিতির ১ হাজার ৯৮৮ জন ভোটারের মধ্যে এক হাজার ৫৫০ জন এবার ভোট দিয়েছেন। একটি ব্যালট বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ, ভোট পড়েছে ৭৮ শতাংশ।

পুনর্নির্বাচিত সভাপতি মাকসুদ কামাল সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৬ ভোট পেয়েছেন। তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকা সাদা দলের প্রার্থী মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আকতার হোসেন খান পেয়েছেন ৪৫৩ ভোট।

সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম পেয়েছেন ৮০৫ ভোট। এ পদে সাদা দলের প্রার্থী পরিসংখ্যান বিভাগের  অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান ৬৮৯ ভোট পেয়েছেন।

এছাড়া নীল প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও জীব বিজ্ঞান অনুষদের ডিন মো. ইমদাদুল হক ৮৬০ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি; ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক তাজিন আজিজ চৌধুরী ৭৭৭ ভোট পেয়ে যুগ্ম-সম্পাদক; অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ৮৯৮ ভোট পেয়ে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হয়েছেন।

অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল

এই প্যানেল থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন লেদার টেকনোলজি অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিউটিটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আফতাব আলী শেখ (৯৪২ ভোট), ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান (৯০৩ ভোট), অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাবিতা রিজওয়ানা রহমান (৮৫৬ ভোট), পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া (৯০১ ভোট), সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম (৭৮৩ ভোট), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের জিনাত হুদা (৮২৫ ভোট), গণিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার (৮৬৫ ভোট), চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন (৭৬৯ ভোট) এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর দে (৮০৪ ভোট)।

সাদা প্যানেলের প্রার্থীদের মধ্যে শুধু কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশলী বিভাগের অধ্যাপক মো. হাসানুজ্জামান সদস্য পদে জয়ী হতে পেরেছেন। তার পক্ষে ভোট পড়েছে ৭৫৯টি।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, সিনেট সদস্য, মাস্টারদা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ ও আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের ডিন। ২০১৩ থেকে ২০১৫ টানা তিন মেয়াদে শিক্ষক সমিতিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করার পর গত দুই বছরও তিনি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলেন।

টানা দুই মেয়াদে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন এবং বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের একজন সদস্য।

নির্বাচনে জয়ের পর অধ‌্যাপক মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই রায় গত এক দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সারা দেশে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের প্রতি সকলের আস্থার প্রতিফলন।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম

“গত এক দশক যাবত বর্তমান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উন্নয়ন সংঘটিত হয়েছে পাশাপাশি সারা দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে উন্নয়ন হয়েছে তার পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও আলোকিত শিক্ষকরা রায় দিয়েছেন। পাশাপাশি এই আলোকিত শিক্ষকরা একটা বার্তা জনণের কাছে দিয়েছেন, তা হলো ৩০ ডিসেম্বর যে নির্বাচন হবে সে নির্বাচনে যেন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তিকে জয়যুক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের উন্নতির যে ধারা তা অব্যাহত থাকুক।”

অন্যদিকে সাদা দলের অধ‌্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত দশ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘দলীয়ভাবে’ শিক্ষক নিয়োগের কারণেই ফলাফলের এ তারতম্য হয়েছে। তবে ফল মেনে নিচ্ছেন তারা।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিবছরের মতো এবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন হয়েছে, শিক্ষকদের রায় আমরা মেনে নিয়েছি। নির্বাচিতদের স্বাগত জানাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে আমরা পাশ থাকব।”

গত কয়েক বছর ধরেই শিক্ষক সমিতিতে আওয়ামী লীগ সমর্থক প্যানেল জয়ী হয়ে আসছে। গতবছরের নির্বাচনে ১৫টি পদের ১৪টি তেই জয় পেয়েছিলেন এ প্যানেলের প্রার্থীরা।