এই সরকার ‘রাক্ষসের মতো’ মানুষ খেয়ে ফেলে: মান্না

গুম ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলোর জন্য দায়ী করে সরকারকে রাক্ষসের সঙ্গে তুলনা করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2018, 11:20 AM
Updated : 4 Dec 2018, 11:26 AM

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ‘গুম হওয়ার ৫ বছর শেষ আর অপেক্ষা কতদিন’ শীর্ষক এক আলোচনায় বক্তব্য রাখেন তিনি।

গত ৬ বছরে গুম হওয়া বেশ কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা এই অনুষ্ঠানে নিজেদের স্বজনকে ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান; অনেকে কান্নায়ও ভেঙে পড়েন।

তখন মান্না বলেন, “কেঁদে কী করবেন? যারা ক্ষমতায় আছে, যারা কিছু করতে পারে আপনাদের জন্য, ওরা সবাই দায়িত্বজ্ঞানহীন, ওদের মানুষের জন্য কোনো দয়া নাই-দরদ নাই। ওরা রাক্ষসের মতো। রাক্ষস যেমন মানুষ খায়, এই সরকার.. মানুষ খেয়ে ফেলছে।”

পাঁচ বছর আগে নিখোঁজ হওয়া ঢাকা মহানগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাজেদুল ইসলাম সুমনের বড় বোন মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী অনুষ্ঠানে বলেন, “আমার মতো আরও ২২ পরিবারের স্বজনরা এখানে উপস্থিত আছে। সবার দাবি, তাদের স্বজন ফিরে আসুক।”

সুমনের কিশোরী মেয়ে হাফসা ইসলাম রাইদা চিৎকার করে বলেন, “বাবাকে খুঁজতে সব জায়গায় গেছি, কিন্তু কোথাও পাইনি। এ কেমন দেশ “

এক বছর আগে নিখোঁজ হওয়া মারুফ জামানের ছোট মেয়ে সামিরা জামান বলেন, “এক বছর হল, আমার বাবা নিখোঁজ হল, এখনও তাকে পাচ্ছি না।”

নিখোঁজ সোহেলের শিশু মেয়ে সাফা বলেন, “ভালো লাগে না। বাবাকে নিয়ে স্কুলে যাব।”

নিখোঁজ আব্দুল কাদের মিয়া মাসুমের মা আয়শা আলী বলেন, “আমরা সাধারণ নাগরিক, সন্তানই আমার সম্পদ। নতুন বছরে সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আশা করি।”

পুরান ঢাকার বংশালের নিখোঁজ আদনানের বাবা এরশাদ আলী, সেলিম রেজা পিন্টুর বোন রেহেনা বেগমও স্বজনদের ফিরে পাওয়ার আকুতি জানান।

সিলেটে আহত ছাত্রদলের একজন কর্মী পুলিশের নির্যাতনের বর্ণনা দেন এই অনুষ্ঠানে।

মান্না বলেন, “আমি আগেও এই অনুষ্ঠানে এসেছি। দেখেছি স্বজনদের জন্য পুরো হল কান্নায় ভেঙে পড়েছে।

“যতজনের নিখোঁজের কথা বলা হচ্ছে, তারা সবাই কি বেঁচে আছে? কারা বেঁচে আছে, আর কারা বেঁচে নেই, এই কথা এরা (সরকার) বলবে না। এরা যতদিন ক্ষমতায় আছে, ততদিন আপনাদের কোনো প্রশ্নের জবাব পাবেন না।”

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে বিএনপিকে সঙ্গী করে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা মান্না বলেন, “অতএব লড়াই একটাই, সেটা হচ্ছে এদের কবল থেকে মুক্তি চাই। তারপর আমাদের স্বজনদের ফিরে পাবার পালা। অতএব চোখের পানিকে বারুদে পরিণত করুন। ভোটের মাধ্যমে এদের পরাজিত করতে চাই, তাছাড়া পারবেন না।

মাহমুদুর রহমান মান্না (ফাইল ছবি)

“যেরকম ‍বুকের মধ্যে ছবি নিয়েছেন, এভাবে বুকে ছবি নেন, ব্যানার নেন, প্ল্যাকার্ড নেন। নিজের এলাকায় যান, বন্ধু- বান্ধব আত্মীয়-স্বজন যাকে পান, তাকেই বলেন, সামনে নির্বাচন এদেরকে জবাব দিতে চাই।

“আপনি যদি গুম খুনের জবাব চান। তাহলে ভোটের লড়াই করতে হবে। সামনে ভোট, এখন একমাত্র ভোটের লড়াই করতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গুম হচ্ছে সব থেকে জঘন্য অপরাধ। এটা খুনের থেকেও জঘন্য। পৃথিবীর বিভিন্ন আইনে যে সংজ্ঞা দেওয়া আছে, সেখানেও এটাকে চরম জঘন্য অপরাধ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা আছে।

‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনে বলা হয়েছে গুম বা খুন যখন পরিকল্পিত এবং ব্যপক সংখ্যায় হয়, তখন সেটাকে আমরা মানবতাবিরোধী হিসেবে বলতে পারি। যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো আন্তর্জাতিক অপরাধ হয়।”

আসিফ নজরুল বলে, “আমাদের দেশে যতগুলো গুমের ঘটনা ঘটেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিকার হয়েছেন সরকার বিরোধী যারা রাজনীতি করেন। কাজেই আমাদের ভাবার কারণ রয়েছে গুম হয়েছে পরিকল্পিতভাবে এবং সংখ্যার দিক থেকেও এটা ব্যাপক সংখ্যায় হয়েছে।

“কাজেই আমি মনে করি, গুমের শিকার হওয়া যেসব পরিবার আছেন আপনারা যদি দেশে বিচার না পান, আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে এর বিচার পাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে চেষ্টা করবেন।”

সুমনের মা হাজেরা খাতুনের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম লালা, গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জোনায়েদ সাকি, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল।