মাদ্রাসা ছাত্রদের ‘ব্যবহার’ করা হচ্ছে, অভিযোগ সাদপন্থিদের

তাবলিগ জামাতে দেওবন্দের অনুসারীরা মাদ্রাসার কিশোর-তরুণদের মধ্যে ‘উগ্র ও জঙ্গি’ মনোভাব তৈরি করছে বলে অভিযোগ করেছে দিল্লি মারকাজের মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্ধলভির অনুসারীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2018, 04:04 PM
Updated : 3 Dec 2018, 04:04 PM

তাদের অভিযোগ, দেওবন্দপন্থি মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীরা টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ ‘জোর করে’ দখল করে রাখার কারণেই শনিবার সংঘর্ষে বাঁধে। 

সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) এক সংবাদ সম্মেলনে সাদপন্থি মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, “বয়স্ক নিরীহ তাবলীগের সাথীদের মারধর, ভয়ভীতি দেখানো, মসজিদে থেকে বের করে দেওয়া, কাকরাইল মসজিদে মুরুব্বিদের কামরা ভাঙচুর, টঙ্গী মাঠ দখলের মত অবৈধ ও বেআইনি কাজে পরিকল্পিতভাবে মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করা হচ্ছে।

“এতে একদিকে যেমন আমাদের ১২ থেকে ২২ বছরের সন্তানদের মধ্যে বাবা-চাচার বয়সী মুরুব্বিদের প্রতি সম্মানবোধ নষ্ট হচ্ছে, অপরদিকে তাদের মধ্যে উগ্রতা ও জঙ্গি মনোভাব তৈরি হচ্ছে।”

শনিবার টঙ্গীর ইজতেমা মাঠ যারা ‘জোর করে’ দখল করে রেখেছিল, তাদের ৮০ শতাংশই মাদ্রসার ছাত্র বলে অভিযোগ করেন আশরাফ।

তাবলিগ জামাতের এ দুই পক্ষের নেতৃত্বের কোন্দলে জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব গত মাসে স্থগিত করা হয়। দেওবন্দপন্থিদের আবেদনে নির্বাচন কমিশন শুক্রবার এক আদেশে ৩০ ডিসেম্বর ভোটের আগে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ করে একটি নির্দেশনাও জারি করে।

কিন্তু সাদপন্থিরা এর মধ্যেই পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা করার ঘোষণা দিলে দেওবন্দিরা ইতজেমা মাঠ দখল করে আশপাশে পাহারা বসায়। অন্যদিকে সাদের অনুসারী শত শত মানুষ শনিবার ভোর থেকে টঙ্গীর পথে রওনা হলে পরিস্থিতি বিস্ফোন্মুখ হয়ে ওঠে।

তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর শনিবার টঙ্গীর স্টেশন রোডের চিত্র।

এক পর্যায়ে জোড় ইজতেমায় যোগ দিতে আসা লোকজন ময়দানের ফটকের তালা ভেঙে এবং সীমানা প্রচীর টপকে ভেতরে ঢুকে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। দুই পক্ষের লোকজন বাঁশ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। ঢিল আর লাঠির আঘাতে উভয়পক্ষের দুই শতাধিক মানুষ আহত হয়, নিহত হন একজন।

ওই সংঘর্ষের জন্য মাওলানা সাদের অনুসারীদের শাস্তি দাবি করে রোববার দেওবন্দিদের এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিরোধ মীমাংসায় আপসের কোনো সুযোগ নেই। এরপর সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে পাল্টা অভিযোগ করা হয় সাদপন্থিদের পক্ষ থেকে।

মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, “গত ৫০ বছর ধরে যে মাঠে তাবলীগের সাথীগণ বাধাহীনভাবে প্রবেশ করেছে, অবস্থান করেছে ও মেহনত করেছে, সেখানে গত এক বছর ধরে অবৈধ ও জোরপূর্বক দখলই সমস্যার মূল কারণ।”

তিনি দাবি করেন, সাদের অনুসারীরা মাঠে গিয়েছিলেন জোড় ইজতেমায় অংশ নিতে, দখলের জন্য নয়।

“মাঠ দখল করার জন্য গেলে আমরা লাঠি-সোঁটা নিয়ে যেতাম। আমরা শুধু তসবীহ ও জায়নামাজ নিয়ে গিয়েছি। আমরা পুলিশের কাছে আবেদন করেছিলাম যে যারা এক বছর ধরে জোরপূর্বক মাঠ দখল করে রেখেছে, তাদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে বের করে দিয়ে আগামী ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি আমাদের ইজতেমার এন্তেজামী কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।”

১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি ইজতেমা করার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো আপত্তি ছিল না দাবি করে আশরাফ আলী বলেন, তারা ইজতেমার প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে অধিকারপ্রাপ্ত হয়ে সেখানে গিয়েছিলেন।

এখন এই জটিলতার কারণে ভিন্ন ভিন্ন দিনে দুই পক্ষকে আলাদাভাবে ইজতেমা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

এছাড়া লিখিত ও মৌখিক ‘অপপ্রচার’ বন্ধ করা, দেশি-বিদেশি জামাতের আলাদা মসজিদে অবস্থান, জোড় ইজতেমায় কোনো পক্ষ থেকে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করা, কোনো বিরোধেই মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার না করা, দুই পক্ষের যে কোনো বিরোধে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মীমাংসার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানান মাওলানা আশরাফ আলী।

অন্যদের মধ্যে সাদপন্থি হিসেবে পরিচিত কাকরাইল মসজিদের মুরব্বি মাওলানা মুনির বিন ইউসূফ, মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ, মাওলানা আব্দুল্লাহ, মাওলানা সাইফুল সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

আরও খবর