২০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থনে ইপিজেডে কল্যাণ সমিতি

রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়নের আদলে ‘শ্রমিক কল্যাণ সমিতি’ গঠনে শ্রমিকদের সমর্থনের হার ১০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2018, 01:36 PM
Updated : 3 Dec 2018, 01:36 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার শেষ বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ২০০৬ সালের মূল শ্রম আইনের সঙ্গে এটাকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য যা যা করার দরকার করা হয়েছে।

“আইএলও, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রেরও অবজারভেশন ছিল এটাকে একটু শ্রমবান্ধব করার জন্য। সেই দাবিতেই এটাকে অনেকটা শ্রমিকদের ফেভারেবল করা করা হয়েছে।”

শফিউল বলেন, “শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠনের জন্য আগে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সমর্থন লাগত, নতুন আইনে সেটা ২০ শতাংশ করা হচ্ছে।”

এছাড়া ইডিজেডের নিজস্ব পরিদর্শন কার্যক্রমের পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যে অধিদপ্তর আছে তারাও যাতে এই আইনের আওতায় পরিদর্শন করতে পারেন আইনে সেই সুযোগ রাখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

শফিউল বলেন, “শ্রমিকদের ধর্মঘট করার ক্ষেত্রে যে তিন-চতুর্থাংশ সমর্থনের বাধ্যবাধকতা ছিল সেটা কমিয়ে দুই-তৃতীয়াংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। শ্রম আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শ্রমিক কল্যাণ সমিতির গঠনতন্ত্র শ্রমিকরা নিজেরা করতে পারবেন, সেই বিধান রাখা হয়েছে।”

নতুন আইনে শ্রমিকদের ধর্মঘট ও লক আউটের অধিকার দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, শ্রমিক কল্যাণ সমিতির নির্বাচিত কর্মকর্তাদের চাকরি সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। মালিকদেরও সমিতি করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

“শ্রমিক কল্যাণ সমিতি মানেই ট্রেড ইউনিয়ন, নামটা ভিন্ন, কিন্তু কাজ একই। শ্রমিকরাও এই নামটি পছন্দ করেছেন।”

আগের আইনে ‘যোগ্য শ্রমিক’ এর যে বিধান ছিল সেটা বাদ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাহী পরিষদের পরবর্তী নির্বাচনের সময় এক বছর থেকে কমিয়ে ৬ মাস করা হয়েছে। অবসর গ্রহণের ক্ষেত্রে শ্রমিকরা সার্ভিস বেনিফিট হিসেবে প্রত্যেক বছরের জন্য ৩০ দিনের মূল মজুরির পরিবর্তে ৪৫ দিনের মূল মজুরি পাবেন।

আইএলও, যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস এবং ইইউর মতামতের ভিত্তিতে শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠনের জন্য আগে যে রেফারেন্ডাম সিস্টেম ছিল অর্থাৎ গণভোটের বিধান ছিল তা বাদ দেওয়া হয়েছে।

“নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানে তিন মাস পর্যন্ত শ্রমিক সমিতি গঠন নিষিদ্ধ ছিল, সেই বিধানটাও বাদ দেওয়া হয়েছে। শ্রমিক কল্যাণ সমিতি গঠনের জন্য আগে ১২টি স্টেপ ছিল, এখন কমিয়ে তিনটি ধাপ করা হয়েছে।”

ইপিজেডের বিনিয়োগকারীরা এই আইনের সঙ্গে একমত কিনা- সবার মত নিয়েই আইনটি করা হয়েছে।

সংসদ না থাকায় আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

পার্বত্য অঞ্চলে ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিপূরণ বাড়ছে

সমতলের মত পার্বত্য তিন জেলায় ভূমি অধিগ্রহণে সমতা তৈরি করতে একটি অধ্যাদেশের সংশোধনীতে অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

শফিউল জানান, ‘দ্য চিটাগং হিল ট্রাকস (ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন) রেগুলেশন, ১৯৫৮’ এর অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

“পার্বত্য চট্টগ্রামে ক্ষতিপূরণ ছিল বাজার মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ। এখন ১৫ শতাংশের জায়গায় সরকারি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে ২০০ শতাংশ এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে তা ৩০০ শতাংশ হবে।”

তিনি বলেন, সমতলে অর্থাৎ ৬১ জেলায় ক্ষতিপূরণের হার হল বর্তমান বাজার মূল্যের সঙ্গে সরকারি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ২০০ শতাংশ এবং বেসরকারি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৩০০ শতাংশ। সমতলের সঙ্গে সমতা করার জন্য পার্বত্য এলাকাতেও একই মূল্য নির্ধারণ করা হল।

এই বিধানটিও অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

পদবি নামল মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রধানের

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের প্রধানের পদবি ‘মহাপরিচালক’ থেকে নামিয়ে ‘পরিচালক’ করতে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (সংশোধন) আইন, ২০১৮’ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “ইউনেস্কোর প্রধান মহাপরিচালক। আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ইউনেস্কোর ক্যাটাগরি দুই এর প্রতিষ্ঠান, এখানকার প্রধানও মহাপরিচালক।

“ক্যাটাগরি-২ এর বিধান হল এখানকার (মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট) যিনি প্রধান হবেন তিনি হবেন পরিচালক। এজন্য মহাপরিচালককে ‘পরিচালক’ করা হয়েছে।”

আগে যেসব জায়গায় ‘মহাপরিচালক’ শব্দটি ছিল সেখানে ‘পরিচালক’ শব্দ স্থানান্তর করা হবে। আর ‘অতিরিক্ত মহাপারিচালক’র জায়গায় হবে ‘অতিরিক্ত পরিচালক’।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ২২ সদস্যের পরিচালনা কমিটি থাকলেও ইউনেস্কোর নিয়মানুযায়ী তা কমিয়ে ছয় সদস্যের করা হচ্ছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইন

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১৮’ চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

শফিউল বলেন, “অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংটাকে সম্প্রসারিত করতে নতুন এই আইন করা হয়েছে।… অন্যান্য ইউনিভার্সিটি যে রকম একেবারে হুবহু একই রকম অনুসরণ করা হয়েছে, তেমন কোনো পরিবর্তন নেই।”

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঢাকার পূর্বাচলে হবে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

সংসদ চলমান না থাকায় নতুন এই আইনটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হবে বলে জানান তিনি।