কক্সবাজার সৈকতে স্থাপনা নির্মাণে হাই কোর্টের স্থিতাবস্থা

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ইনানী ও সুগন্ধা পয়েন্টের পরিবেশগত সংকটাপন্ন স্থানে ‘সি বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটি’র স্থাপনা নির্মাণ কাজে ছয় মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Dec 2018, 12:39 PM
Updated : 4 Dec 2018, 05:02 AM

জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে সোমবার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়।

রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, তার সাথে ছিলেন সাঈদ আহমেদ কবীর। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

কক্সবাজারের ‘সি বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইনানী ও সুগন্ধা পয়েন্টর সংকটাপন্ন স্থানে রাত্রিকালীন বাজার ও মার্কেট নির্মাণের সিদ্ধান্ত কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

চার সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বিচ ম্যানেজেম্যান্ট কমিটির চেয়ারপারসন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক, কক্সবাজার পুলিশ সুপার, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (চট্টগ্রাম বিভাগ), কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (পর্যটন ও প্রটোকল) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (কক্সবাজার), কক্সবাজারের সহকারী কমিশনারকে (পর্যটন ও প্রটোকল) রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে এ রিট আবেদনটি করা হয়েছিল জানিয়ে আইনজীবী সাঈদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ১৩ জুন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে এক সভায় সৈকতের এসব পয়েন্টে রাত্রিকালীন বাজার ও মার্কেট নির্মাণের নেওয়া হয়।

“কিন্তু পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৫ ধারা অনুযায়ী পরিবেশের সংরক্ষণ, উন্নয়ন বিষয়ে বলা আছে, সরকার ইচ্ছা করলে এসব এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে পারে। ১৯৯৯ সালে এ সংক্রান্ত একটি গেজেটও হয়েছে। সেই গেজেটে পরিবেশগত সংকটাপন্ন স্থানগুলো নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল; যার মধ্যে কক্সবাজারও আছে। তাছাড়া পরিবেশের ক্ষতি ঘটায় এমন কাজ নিষিদ্ধ করা হয়েছে ওই গেজেটে।”

এ আইনজীবী বলেন, “কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের যে মহাপরিকল্পনা তাতে সৈকত থেকে তিনশ মিটার পর্যন্ত  ‘নো ডেভেলপমেন্ট জোন’ আছে। এই এরিয়াতে কোনো কিছুই করা যাবে না।”

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এর ৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সরকার যদি এই মর্মে সন্তুষ্ট হয় যে, পরিবেশের অবক্ষয়ের কারণে কোনো এলাকার প্রতিবেশ ব্যবস্থা (Eco-system) সংকটাপন্ন অবস্থায় উপনীত হইয়াছে বা হইবার আশংকা রহিয়াছে তাহা হইলে সরকার, সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, উক্ত এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (eologically Critical Area) ঘোষণা করিতে পারিবে এবং অবিলম্বে উক্ত সংকটাপন্ন অবস্থা হইতে উত্তোরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে’।

আর ৫(৪) ধারায় বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন বলিয়া ঘোষিত এলাকায় কোন কোন ক্ষতিকর কর্ম বা প্রক্রিয়া চালু রাখা বা শুরু করা যাইবে না তাহা সরকার উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত প্রজ্ঞাপনে নির্দিষ্ট করিয়া দিবে’।

গত ৫ নভেম্বর সি বিচ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে উকিল নোটিস দিয়েছিল বেলা। কিন্তু কমিটির জবাবে সন্তুষ্ট হতে না পেরে রিট দায়ের করা হয়।