ঢাকার হোটেল থেকে আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেনের লাশ উদ্ধার

বাংলাদেশের খ্যাতিমান আলোকচিত্রী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেনের লাশ পাওয়া গেছে ঢাকার একটি হোটেলে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2018, 08:39 AM
Updated : 1 Dec 2018, 02:40 PM

শেরেবাংলা নগর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, শনিবার সকালে পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনের একটি কক্ষের দরজা ভেঙে আনোয়ার হোসেনের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

তবে ৭০ বছর বয়সী এই আলোকচিত্রীর মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

সূর্যদিঘল বাড়ী, এমিলির গোয়েন্দা বাহিনী, লালসালু ও অন্যজীবন সিনেমার চিত্রগ্রাহক আনোয়ার হোসেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার। বলা হয়, বাংলাদেশের আলোকচিত্রীদের পুরো একটি প্রজন্মকে নতুন পথের দিশা দিয়েছে তার কাজ।

দুই যুগের বেশি সময় ফ্রান্সে বসবাসকারী আনোয়ার হোসেন সে দেশের পাসপোর্ট নিলেও বছর দুই আগে দেশে ফিরে শরীয়তপুরে থাকতে শুরু করেন। একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৮ নভেম্বর ঢাকায় এসে হোটেল ওলিওতে উঠেছিলেন তিনি। 

দৃকের জেনারেল ম্যানেজার এএসএম রেজাউর রহমান বিডিনিউজ টেয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই অনুষ্ঠানের জন্য সকালে দুজন লোক আনোয়ার হোসেনের হোটেল কক্ষে গিয়ে দরজা বন্ধ পান। অনেক ডাকাডাকির পরও তিনি দরজা না খোলায় হোটেল কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া হয়। পরে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভেতরে আনোয়ার হোসেনকে মৃত অবস্থায় পায়।

শেরেবাংলা নগর থানার উপ পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আনোয়ার হোসেন ছিলেন হোটেলের ৮০৯ নম্বর কক্ষে। সেখানে বিছার ওপর তার মৃতদেহ ছিল।”

১৯৪৮ সালের ৬ অক্টোবর পুরান ঢাকার আগানবাব দেউড়িতে আনোয়ার হোসেনের জন্ম। বাবা সিনেমার অফিসে কাজ করতেন বলে শৈশবেই রুপালি জগতের সঙ্গে তার পরিচয়। তখনই ছবি আকার শুরু। আর কলেজে উঠে স্কলারশিপের টাকা দিয়ে ৩০ টাকায় এক বন্ধুর কাছ থেকে আগফা ক্যামেরা কেনার ছবি তোলা শুরু করেন আনোয়ার।

নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে আনোয়ার হোসেন ভর্তি হন বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগে। ১৯৭৪ সালে স্কলারশিপ নিয়ে সিনেমাটোগ্রাফির ওপর ডিপ্লোমা করতে যান ভারতের পুনে ফিল্ম ইনস্টিটিউটে। সেখানে বিখ্যাত জাপানি নির্মাতা আকিরা কুরোসাওয়ার সঙ্গে তার আলাপ হয়।

পুনে থেকে ফিরে মসিউদ্দিন শাকেরের 'সূর্য দীঘল বাড়ী' আর বাদল রহমানের 'এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী' চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেন আনোয়ার হোসেন। সেই সময় পরিচয় হয় অভিনেত্রী ডলি আনোয়ারের সঙ্গে। ১৯৭৯ সালে বিয়ে হয় তাদের।

১৯৯১ সাথে ডলি আনোয়ারের মৃত্যুর পর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যান্ড ঘুরে প্যারিসে বসবাস শুরু করেন আনোয়ার। ১৯৯৬ সালে ফরাসি নাগরিক মরিয়মকে বিয়ে করেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানের আশাহি পেইন্টিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাওয়া আনোয়ার হোসেন ১৯৭৮ সালে কানাডায় কমনওলেথ আলোকচিত্র প্রতিযোগিতায় ছয়টি মেডেল জয় করেন। এরপর চার দশকে ৬০টির মত আন্তর্জাতিক পুরস্কার জমে এই আলোকচিত্রীর ঝুলিতে।