আওয়ামী লীগ সভানেত্রী একই সঙ্গে বলেছেন, ক্ষমতায় যেতে না পারলেও তার আফসোস থাকবে না, কারণ দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার ভিত ইতোমধ্যে তৈরি করে দিয়েছেন তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বুধবার ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।
টানা ১০ বছর বাংলাদেশের সরকার প্রধানের দায়িত্বে থাকা শেখ হাসিনা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় জানান।
তিনি বলেন, “যতই অন্ধকার আসুক, যতই ঘন দুর্যোগ আসুক, গভীর হোক জঙ্গল কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার পথ করে নিতেই হবে।”
মিয়ানমারে জাতিগত নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১১ লাখ মানুষকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথা তুলে ধরে এজন্য দেশের জনগণ ও কক্সবাজারবাসীকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের আশ্রয় দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমার ছোট বোন শেখ রেহানা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল তুমি ১৬ কোটি মানুষের খাবার দাও, তুমি কি আর ৭-৮ লাখ লোকের খাবার দিতে পারবে না? আমি বলেছিলাম, পারব, অবশ্যই পারব। আমরা তা পেরেছি, সেটা সারা বিশ্বকে দেখিয়েছি ।”
যুদ্ধ নয়, আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের দিকে জোর দেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী-সেনাবাহিনী,নৌ বাহিনী, বিমান বাহিনী-আমরা কারো সাথে যুদ্ধ করব না। যুদ্ধ করতে আমরা চাই না। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশে যে সশস্ত্র বাহিনী হবে সেটা স্বাধীন দেশের উপযুক্ত হতে হবে।
“আমরা যুদ্ধ করব না, কিন্তু কেউ আক্রমণ করলে আমরা ছেড়ে দেব না। যতক্ষণ আমাদের শ্বাস আছে আমরা প্রতিরোধ করব।”
সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
“কয়েক শতভাগ এই বেতনভাতা, সুযোগ সুবিধা, আবাসনের ব্যবস্থা, গাড়ি ক্রয় থেকে শুরু করে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে সহযোগিতার হাত বাড়াইনি আর সুযোগ সৃষ্টি করে দেইনি। কারণ যারা কাজ করবে দেশের জন্য, তারা যেন স্বস্তিতে কাজ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করেছি।”
তার সরকার আমলে ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি, দারিদ্র্যের হার ৪০ থেকে ২১ শতাংশে নামিয়ে আনা, মাথা পিছু আয় বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
এছাড়া বিদ্যুৎ সংকটের নিরসন এবং মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবা জনগণের হাতের নাগালে পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেন তিনি।
দারিদ্র্যের হার আরও অন্তত ৫ ভাগ কমিয়ে দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার আশা ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, “আগামীতে নির্বাচন আছে। সেই নির্বাচনে জনগণ যদি ভোট দেয়, যদি চায় দেশের সেবা করি হয়ত আল্লাহর রহমতে আবার ফিরে আসব। আবার আপনাদের সঙ্গে এখানেই দেখা হবে।
“আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করব, ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি উদযাপন করব। ইনশাল্লাহ, বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবেই গড়ে তুলতে আমরা সক্ষম হব। ”
জীবনানন্দ দাসের ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়’ কবিতার কয়েক পঙক্তির মাধ্যমে বক্তব্য শেষ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য শেষে অনুষ্ঠানস্থলে ঘুরে ঘুরে আমন্ত্রিত অতিথি ও সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ,বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত,সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মাহফুজুর রহমান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে ছিলেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতাপূর্ণ ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সেনাবাহিনীর নয়জন, নৌবাহিনীর একজন ও বিমান বাহিনীর তিনজনসহ ১৩ জনকে ‘শান্তিকালীন পদক ২০১৭’ দেন।