ঢাবির ঘ ইউনিট: সন্দেহভাজন ১৪ জন পরীক্ষাই দেননি, ৮ জন অনুত্তীর্ণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটে প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত হিসেবে যাদের নাম সিআইডির তদন্তে এসেছে, তাদের ১৪ জনই পুনঃপরীক্ষায় অংশ নেয়নি; আটজন পরীক্ষায় অংশ নিলেও উত্তীর্ণ হতে পারেননি।

তারেক হাসান নির্ঝর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2018, 07:22 PM
Updated : 19 Nov 2018, 07:22 PM

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠার পর আন্দোলনের মুখে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ’ঘ’ ইউনিট পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, সোমবার তার ফল প্রকাশ হয়েছে।

আগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে নেওয়া এই পরীক্ষার ফলে দেখা যায়, ভর্তির যোগ্য বিবেচিত হয়েছেন ৬১ দশমিক ১ শতাংশ শিক্ষার্থী।

প্রশ্ন ফাঁসের পর সিআইডি তদন্ত করে ২২ পরীক্ষার্থীকে জালিয়াত হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল। এদের মধ্যে ২০ জনই উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান শাখা থেকে এসেছেন, বাকি দুজন ব্যবসায় শিক্ষা শাখার।

ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১২ অক্টোবরের প্রথম পরীক্ষায় মেধাক্রম ৪২১, ৮০৭, ১২১৫, ১৩২০, ১৪৬৪, ১৫০৭, ৫৪২, ৩০৮৮, ৩৯৫৭, ৭৭৮৮, ৭৬০৭, ৩৯৩৩ ও ১০৩১৫ থাকা সন্দেহভাজন ভর্তিচ্ছুরা পুনঃপরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন।

সন্দেহভাজন ৮ জন যারা প্রথম পরীক্ষায় মেধাক্রমে ৩৫০, ৪০০, ৬২৩, ১৭৩৭, ১৯০২, ২৩৮৩, ৪৫২২ ও ১৪৫ এ ছিলেন, তারা এবারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি।

‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরীক্ষার্থী হিসেবে তারা (২২ জন) প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে, প্রশ্নপত্র পেয়েছে, তা সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে।

“তারা গভীরভাবে তদন্ত করছে। তাদের বিরুদ্ধে নিশ্চয়ই চার্জশিট দাখিল হবে। সেই হিসেবে আমরা মনে করি, বিচার হওয়া প্রয়োজন। আমি মনে করে এই ধরনের ক্রাইমে দ্রুত বিচার হওয়া প্রয়োজন। কারণ একটা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি যদি না দেওয়া হয়, তাহলে জালিয়াতদের এই সিন্ডিকেশন ভাঙবে না।”

ভর্তি পরীক্ষা পুনরায় নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ

প্রথম পরীক্ষায় রেকর্ড নম্বর নিয়ে যিনি প্রথম হয়েছিলেন, সেই জাহিদ হাসান আকাশসহ মেধা তালিকার ৩০ জনের মধ্যে থাকা চারজন পুনঃপরীক্ষায় অংশ নেননি। তবে এই চার জনের নাম সিআইডির তদন্তে উঠে আসেনি।

অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, “ফলাফলে আমরা তেমন পরিবর্তন দেখছি না। আমাদের পাসের হার অত্যন্ত সন্তোষজনক, প্রত্যাশিত ফলাফল।

“যে মানের প্রশ্ন ১২ অক্টোবরের পরীক্ষায় করা হয়েছিল, সে মানেরই প্রশ্ন আমরা এবারও করেছি। লক্ষ্যণীয় যে, যারা আগেরবার মেধা তালিকার ছিলেন, তারা প্রায় সবাই এবারও মেধা তালিকায় উপরের দিকেই আছেন।”

১২ অক্টোবরের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় থাকা প্রথম ৩০ জনের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফলাফলে বড় ধরনের কোন পরিবর্তন আসেনি৷

১২ অক্টোবর প্রথম পরীক্ষায় পাস করা ১৮ হাজার ৪৬৪ জন ভর্তিচ্ছু  শিক্ষার্থী নিয়ে গত ১৬ নভেম্বর পুনঃপরীক্ষার আয়োজনে করেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দ্বিতীয় দফা এই পরীক্ষায় ১৬ হাজার ১৮১ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন ৯ হাজার ৮৮৬ জন।

এর মধ্যে বিজ্ঞান শাখা থেকে আছেন ৬ হাজার ৮১৪ জন, ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে আছেন ১ হাজার ১৭২ জন এবং মানবিক শাখা থেকে আছেন ১ হাজার ৯০০ জন।

উত্তীর্ণদের মধ্যে ১ হাজার ৬১৫ জন শিক্ষার্থী শেষ পর্যন্ত সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদ, কলা অনুষদ ও শর্ত সাপেক্ষে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে বিভাগগুলোতে লেখাপড়া করার সুযোগ পাবেন।

মোট আসনের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আসন ১১৫২ টি, ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আসন ৪১০ টি ও মানবিক থেকে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য আসন সংখ্যা ৫৩টি।