রোহিঙ্গা নিপীড়ন: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাস

রোহিঙ্গা নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আরেকটি প্রস্তাব পাস হয়েছে জাতিসংঘে।

নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2018, 05:23 AM
Updated : 17 Nov 2018, 05:25 AM

শুক্রবার পাস হওয়া এই প্রস্তাবে নিন্দার পাশাপাশি এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে নাগরিকত্ব দেওয়ার পথ তৈরি করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটিতে (থার্ড কমিটি) ১৪২-২৬ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়; ২৬টি দেশ ভোট দানে বিরত ছিল।

চীন ও রাশিয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের প্রতিবেশী দেশ ক্যাম্বোডিয়া ও লাওস প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়।

মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসির পক্ষে বাংলাদেশ ও ইউরোপের জোট ইইউর পক্ষে অস্ট্রিয়া যৌথভাবে এই প্রস্তাবটি তুলেছিল।

প্রস্তাবের পক্ষে ওআইসির পক্ষে বক্তব্যে জাতিসংঘ তুরস্কের স্থায়ী প্রতিনিধি ফরিদুন সিনিরলিগ্লু বলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নানা কৌশলে নির্যাতিত হয়ে আসছে, ২০১৭ সালে তাদের উপর অভিযান ছিল ওই কৌশলেরই একটি ধাপ।

সবাই মিলে সমন্বিত একটি কৌশল প্রণয়ন করতে না পারলে এই সঙ্কটের সমাধান অসম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।

তুরস্কের প্রতিনিধি বলেন, ওআইসি মনে করে, রোহিঙ্গাদের তাদের অধিকার নিয়ে মিয়ানমারে বসবাস নিশ্চিত করতে হবে, আর তাদের উপর নিপীড়নকারীদের শাস্তি না হলেও এটা অসম্ভব।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধের দাবিতে গত বছরের নভেম্বরে ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ। ছবি: মোস্তাফিজুর রহমান

মিয়ানমারের স্থায়ী প্রতিনিধি হাউ দো সুয়ান আলোচনায় বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও একপেশে’ এই প্রস্তাব পাস হলে রাখাইন রাজ্যে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় মিয়ানমার সরকারের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করবে।

আলোচনায় জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বিশ্বের সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের প্রতি দায়িত্ব পালনের স্বার্থে এই প্রস্তাব পাস করতে সবাইকে আহ্বান জানান।

মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার হয়ে কয়েক দশক ধরে চার লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে ছিল। গত বছরে অগাস্টে রাখাইন প্রদেশে মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান শুরুর পর আরও সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গাদের মুখে মিয়ানমারের সৈন্যদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠে আসে। জাতিসংঘ একে বর্ণনা করে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার এই শরণার্থীদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে; সেই অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার প্রত্যাবাসন শুরুর কথা ছিল। কিন্তু আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায়নি বলে বাংলাদেশও তাদের উপর জোর খাটায়নি।

জাতিসংঢ়ঘ সাধারণ পরিষদের থার্ড কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন

মাসুদ বিন মোমেন এই প্রসঙ্গ ধরে বলেন, “তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গা সদস্যরা মিয়ানমারের আশ্বাসের প্রতি কোনোভাবেই আস্থা রাখতে পারেনি এবং একটি পরিবারও মিয়ানমারে স্বেচ্ছায় ফিরে যেতে সম্মত হয়নি। তারা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে, নাগরিকত্বের পূর্ণ নিশ্চয়তা, নিজভূমিতে অধিকার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিপূরণ প্রদান, সহিংসতা থেকে সুরক্ষা ও সহিংসতার বিচার করা এবং ন্যায় বিচার প্রাপ্তির পূর্ণ নিশ্চয়তা ব্যতীত মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।

“তাই রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ তৈরির নিশ্চয়তা বিধানে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহকে অবশ্যই মিয়ানমারে বাধাহীন প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।”

আলোচনার পর প্রস্তাবটি ভোটাভুটিতে যায় এবং তা সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে পাস হয়।

গত বছর এই থার্ড কমিটিতে ওআইসির আহ্বানে একই ধরনের একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল, যা পরে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে পাস হয়।

তখন থার্ড কমিটিতে ১৩৫টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল, বিপক্ষে ছিল ১০টি দেশ। এবার প্রস্তাবের পক্ষে ভোট বেড়েছে।

থার্ড কমিটিতে গৃহীত এই প্রস্তাব আগামী ডিসেম্বরে সাধারণ পরিষদের প্লেনারিতে উপস্থাপিত হবে।