প্রকাশক দীপন হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র দাখিল

প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যামামলায় সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ ৮ জঙ্গিকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2018, 12:03 PM
Updated : 15 Nov 2018, 01:02 PM

হত্যাকাণ্ডের তিন বছর পর বৃহস্পতিবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্রটি জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার ফজলুর রহমান।

আদালত পুলিশের সংশিষ্ট সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন মহানগর হাকিম সরাফুজ্জামান আনসারী অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। এই অভিযোগপত্র আমলে নেওয়ার শুনানি হবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর।

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, অভিযোগপত্রে রাষ্ট্রপক্ষে ২৬ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। 

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে ছয়জন কারাগারে এবং অন্য দুজন পলাতক বলে জানান তিনি। আসামিরা সবাই নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য বলে পুলিশ আগেই জানিয়েছিল।

গ্রেপ্তার ছয়জন হলেন সুনামগঞ্জের মইনুল হাসান শামীম (২৪), কুমিল্লার মো. আব্দুস সবুর (২৩), চট্টগ্রামের খায়রুল ইসলাম (২৪), মো. শেখ আব্দুল্লাহ (২৭), লালমনিরহাটের মো. আবু সিদ্দিক সোহেল (৩৪) ও ময়মনসিংহের মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন (২৫)।

জিয়া ও আকরাম হোসেন হাসিব পলাতক। এই জঙ্গি গোষ্ঠির সামরিক কমান্ডারের দায়িত্বে থাকা জিয়ার পরিকল্পনা এবং নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে শুরু থেকেই বলে আসছিল পুলিশ।

বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের ছদ্মবেশ এই রকম হতে পারে বলে পুলিশের ধারণা (ফাইল ছবি)

এসআই মাহমুদুর জানান, আট আসামি বাদে এই মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার ১১ জনকে অব্যাহতি দিতে সুপারিশ করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা।

দীপন হত্যার ঘটনায় শাহবাগ থানায় তার স্ত্রী ডা. রাজিয়া রহমান অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেছিলেন। তদন্ত শুরুর পর দফায় দফায় প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছানোয় হতাশা প্রকাশ করেছিল দীপনের পরিবার।

লেখক-প্রকাশক, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের উপর ধারাবাহিক হামলার মধ্যে ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে নিজের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জাগৃতির কার্যালয়ে আক্রান্ত হন দীপন। বদ্ধ ঘরে তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল।

দীপন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হকের ছেলে।

দীপন হত্যাকাণ্ডে জড়িত মোট নয়জনকে শনাক্তের কথা জানালেও একজনের পরিচয় জানা যায়নি। তার পরিচয় জানা গেলে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

দীপনকে যে বছর হত্যা করা হয়েছিল, সেই ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলা চলার সময় টিএসসিতে কুপিয়ে হত‌্যা করা হয় লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায়কে। এরপর কয়েক মাসের ব‌্যবধানে নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় নিলয়সহ কয়েকজন ব্লগার-লেখককে হত্যা করা হয়।

ঢাকা মেডিকেলে ফয়সল আরেফিন দীপনের লাশ

এরপর ৩১ অক্টোবর আজিজ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় জাগৃতি প্রকাশনীর কার্যালয়ে দীপনকে হত্যার দিন একই সময়ে লালমাটিয়ায় আরেক প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে এর কর্ণধার আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুলসহ তিনজনকে একই কায়দায় কোপানো হয়েছিল। তবে টুটুলসহ তিনজন বেঁচে যান।

জাগৃতি ও শুদ্ধস্বর দুই প্রকাশনা থেকেই বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশিত হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক অজয় রায়ের ছেলে অভিজিৎসহ ব্লগার হত্যার তদন্তেও আনসার আল ইসলাম নাম উঠে আসে।

অভিজিৎ ও নিলয় হত্যার অভিযোগপত্র এখনও দিতে পারেনি পুলিশ।

দীপন হত্যামামলার অভিযোগপত্র দিতে দেরির কারণ দেখিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করায় এবং কোনো সূত্র না থাকায় (ক্লুলেস) তদন্তে লম্বা সময় লেগেছে।

আরও খবর