রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন: সব প্রস্তুত, তবু অনিশ্চয়তা

জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার আপত্তির মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরুর প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হলেও ঘোষণা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের ফেরানো শুরু করা যাবে কি না- সে বিষয়ে শেষ মুহূর্তে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও কক্সবাজার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2018, 06:14 PM
Updated : 15 Nov 2018, 02:41 AM

নাম প্রকাশ না করে এক সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বুধবার রাতে জানিয়েছে, রোহিঙ্গারা কেউ ফিরতে রাজি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার প্রত্যাসাবন শুরুর পরিকল্পনা আটকে গেছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি আসেনি। 

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কর্মকর্তারা বুধবার দফায় দফায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। কিন্তু সেসব বৈঠকের ফলাফল তারা প্রকাশ করেননি। প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য বাছাই করা রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকেও সীমান্তের কাছে ট্রানজিট ক্যাম্পে নেওয়া হয়নি।

প্রত্যাবাসন নির্ধারিত সময়ে শুরু হচ্ছে কি না জানতে চাইলে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বুধবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দিক থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কাল (বৃহস্পতিবার) সকাল নাগাদ পুরো বিষয়টি স্পষ্ট হবে।”

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে কক্সবাজারের উখিয়ার জামতলী ও টেকনাফের উনচিপ্রাং আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ৪৮৫টি পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে। প্রতিদিন ১৫০ জন করে ১৫ দিনে প্রথম ধাপের এই প্রত্যাবাসন শেষ হবে।

এর মধ্যে দেড়শ জনের প্রথম দলটিকে বৃহস্পতিবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম পয়েন্ট দিয়েই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য গত কয়েক দিন ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রত্যাবাসন কমিশন। ঘুমধুম সীমান্ত থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে তৈরি হয়েছে ট্রানজিট ক্যাম্প, যেখানে ফিরতি পথের রোহিঙ্গাদের  রাখার সব ব্যবস্থাই করা হয়েছে।

কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার মত অনুকূল পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি জানিয়ে প্রত্যাবাসন শুরুর বিরোধিতা করে আসছে জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার মিশেল বাশেলেট মঙ্গলবারও এক বিবৃতিতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো হলে নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আসা এই জনগোষ্ঠীর জীবন ফের ঝুঁকিতে পড়তে পারে।

গতবছর অগাস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গতবছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও নানা কারণে প্রত্যাবাসন বিলম্বিত হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত গত ৩০ অক্টোবর ঢাকায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে প্রত্যাবাসন শুরুর জন্য মধ্য নভেম্বর সময় ঠিক হয়।

এদিকে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে ফেরার ‘অনুকূল পরিবেশ তৈরি’ হলে তাদের প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার জন্য গত এপ্রিলে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ। পরে মিয়ানমার সরকারও ইউএনএইচসিআরের সঙ্গে একই ধরনের সমঝোতায় আসে। 

ওই সমঝোতায় বলা হয়, বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা শরণার্থীরা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করতে সব পক্ষই কাজ করবে।

বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের ফেরার বিষয়টি যে স্বেচ্ছায় হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে গত দুদিনে ৫০টি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ইউএনএইচসিআরের প্রতিনিধিরা। সেই প্রতিবেদন তারা বুধবার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কাছে হস্তান্তর করেন।

কমিশনের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, তালিকাভুক্ত দেড়শ শরণার্থীর কেউ ফিরতে চান না বলে ইউএনএইচসিআরকে জানিয়েছেন। ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনটি তারা ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় শেষ বৈঠকে ইএনএইচসিআর কি সিদ্ধান্ত দিয়েছে জানতে চাইলে প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দিক থেকে আমরা প্রস্তুত। ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া ছাড়া সামান্য কিছু কাজ বাকি রয়েছে। আমরা কাজ করছি; দেখা যাক। কাল সকাল নাগাদ দেখি। আমরা আশাবাদী থাকতে চাই।”