‘মি টু’: আরও অভিযোগ আসছে

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘#মি টু’ আন্দোলনের ধাক্কা হলিউড, বলিউড ছাড়িয়ে বাংলাদেশেও লেগেছে কিছুদিন হল; মুখ খুলতে শুরু করেছেন সমাজে প্রতিষ্ঠিত পুরুষদের দ্বারা ‘যৌন নিপীড়নের’ শিকার নারীরা।

সুলাইমান নিলয় জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2018, 05:03 PM
Updated : 13 Nov 2018, 05:32 PM

সর্বশেষ খ্যাতনামা আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলামের অভিযোগের আঙুল তুলেছেন তার কাছে আবৃত্তির প্রশিক্ষণ নেওয়া জাকিয়া সুলতানা মুক্তা। গত ১১ নভেম্বর নিজের ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে ১০ বছর আগের সেই ঘটনার কথা বলেছেন জাকিয়া। 

এর আগে ৮ নভেম্বর জার্নালিজম ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের (জেএটিআরআই) প্রধান জামিল আহমেদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন আসমাউল হুসনা নামের এক নারী।

২০০৬ সালে আফ্রো আমেরিকান সামাজিক আন্দোলনের কর্মী তারানা বুরকি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নারীর উপর যৌন নিপীড়নের বিষয়ে প্রথমবারের মতো ‘মি টু’ ধারণার কথা বলেন, পরে একই নামে একটি প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় পরে হলিউড অভিনেত্রী  অ্যালিসা মিলানো প্রযোজক হার্ভে উইনস্টেইনের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মি টু হ্যাশট্যাগ দিয়ে আন্দোলনের সূত্রপাত করেন।

এরপর একে একে মুখ খুলতে থাকেন হলিউডের অভিনেত্রীরা। নীরবতা ভেঙে যৌন নিগ্রহের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান দিতে থাকেন নারীরা।

পরে এর ধাক্কা এসে লাগে ভারতেও। শুধু রুপালি জগতেই নয়, রাজনীতিসহ অন্য ক্ষেত্রেও যৌন নিপীড়নের কথা মুখ ফুটে বলতে শুরু করেছেন তারা।

বাংলাদেশিদের মধ্যে মডেল মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি সম্প্রতি রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ তুলে প্রথম আলোচনার সূত্রপাত ঘটান।

এর ধারাবাহিকতায় পরে শুচিস্মিতা সিমন্তি নামের আরেক নারী তার মায়ের এক সময়কার বন্ধু-সহকর্মী সাংবাদিক প্রণব সাহার বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তুলে ধরেন ফেইসবুকে।

এরপর পাঠক সমাবেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল ইসলাম বিজুর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ তোলেন ট্রান্সজেন্ডার শিল্পী তাসনুভা আনান শিশির। অভিযোগের তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হল মাহিদুল ইসলাম আর জামিল আহমেদের নাম।

তবে রংধনুর রফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক প্রণব সাহা, পাঠক সমাবেশের বিজুর মতো মাহিদুলও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

মাহিদুল ইসলাম

আবৃত্তি সংগঠন সংবৃতার সপ্তম কর্মশালায় প্রথম স্থান অধিকার করা জাকিয়া তার সাবেক শিক্ষক মাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ফেইসবুকে লিখেছেন।

জাকিয়া লিখেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির একটি কক্ষে অনুশীলনের ছলে মাহিদুল তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তখন আরেক সহপাঠীর আকস্মিক উপস্থিতিতে সেদিন রক্ষা পেয়েছিলেন তিনি।

অভিযোগটির বিষয়ে জানতে চাইলে মাহিদুল ইসলাম ১০ বছর আগের ঘটনাটি মনে করতে পারছেন না বলে জানান।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আট বছর আগে দলটি ছেড়ে আসেন তিনি। ওই দলটি ছেড়ে আসার সময়ও তার বিরুদ্ধে ‘অপপ্রচার’ চালানো হয়েছিল।

তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল করার জন্য এখন এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে বলে মাহিদুলের দাবি।

জাকিয়া যে অভিযোগ তুলেছেন, তেমন কিছু ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি।

জামিল আহমেদ

বাংলাদেশে ‘#মি টু’ আন্দোলনের ওপর দৃষ্টি রাখা একাধিক সাংবাদিকের মতে, বাংলাদেশে অবস্থান করে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা প্রথম নারী আসমাউল হুসনা।

২০১৩ সালে ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে গত ৭ নভেম্বর আসমাউল হুসনা ফেইসবুকে যে স্ট্যাটাস লেখেন, তাতে অভিযোগের কাঠগড়ায় জার্নালিজম ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (যাত্রী) প্রধান জামিল আহমেদ।

ওই বছরের কোনো একদিন শিল্পকলা একাডেমিতে দেখা করতে যাওয়ার পরের ঘটনা স্মৃতিচারণ করে আসমাউল হুসনা লিখেছেন, বন্ধু হওয়ার কথা বলে তাকে শিল্পকলা একাডেমিতে নিয়ে জোর করে চুমু খেয়েছিলেন জামিল। 

“আমি খুবই ভীত ও হতভম্ব হয়ে যাই। তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মৎস্য ভবনের দিকে দৌড়ে গিয়ে রাস্তা পার হয়ে রিকশা নেই। সেদিন আমি সারা রাত কেঁদেছি এবং ঘুমাতে পারিনি। আমি বাইরে যেতে ভয় পেতাম এবং নতুন মানুষের সাথে দেখা করতে ভয় পেতাম। এই ট্রমা ও ভয় থেকে বের হতে আমার বছরের পর বছর লেগেছে। তবে সম্পূর্ণভাবে ক্ষত সেরে ওঠেনি।”

আসমাউল হুসনার অভিযোগের বিষয়ে জানতে জামিল আহমেদের ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও সাড়া মেলেনি। পরিচয় দিয়ে এসএমএস করার পরও ওপাশ থেকে জবাব মেলেনি। তবে ফোন কলগুলোর মধ্যে কয়েকবার তাকে ‘ওয়েটিং’এ পাওয়া গেছে।