একাদশে ‘নতুন ইতিহাস’ গড়ার আশা সিইসি হুদার

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটকে অতীতের সব নির্বাচন থেকে ‘আলাদা’ হিসেবে দেখছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা। 

কাজী নাফিয়া রহমানবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2018, 12:41 PM
Updated : 13 Nov 2018, 04:25 PM

তিনি আশা করছেন, সব দলের অংশগ্রহণে এবারের ভোট সফলভাবে আয়োজন করা গেলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ‘স্থিতিশীলতা’ আসবে; তৈরি হবে ‘ইতিহাস’।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়ে মঙ্গলবার এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন সিইসি হুদা।

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের মাধ্যমে নতুন একটা ইতিহাস তৈরি হবে। কেননা এই নির্বাচন যদি সফল হয়, তাহলে এরপর থেকে হয়ত সরকার ও সংসদ থেকেই নির্বাচন পরিচালিত হবে। স্থিতিশীল অবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।”

এ নির্বাচন সফল হলে কেন তা ইতিহাস হবে, তার একটি ব্যাখ্যাও সিইসি তার বক্তৃতায় দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “আসলেই এ বছরের নির্বাচনের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। কখনও রাষ্ট্রপতি শাসিত, কখনও সেনাবাহিনীর অধীনে, কখনও কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু এবারই সরকারের অধীনে নির্বাচন।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত গত দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন ওই কাতারে ফেলা হচ্ছে, তার উত্তর সিইসি নিজেই দিয়েছেন। 

“আপনারা বলতে পারেন, ২০১৪ সালে সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে। কিন্তু তখন সব দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি।”

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপের পর ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন থেকে দলীয় সরকারের অধীনে ভোট হচ্ছে। কিন্তু সংসদ বহাল রেখে ভোটে ‘সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি’ করা সম্ভব কি না- সেই প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো তখন থেকেই বিভক্ত।

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো বরাবরই সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার আদলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের দাবি জানিয়ে আসছে।

সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে। ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে ওই নির্বাচনে অংশ নেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ১২টি দল। তাতে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করে।

আওয়ামী লীগ ও শরিকরা সংসদ ভেঙে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি এবারও মেনে নেয়নি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও এ বিষয়টি রাজনীতির অঙ্গনে উত্তাপ ছড়িয়েছে।

বিরোধী জোট বলে আসছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা থেকে শুরু করে প্রশাসন, পুলিশসহ সব জায়গায় ক্ষমতাসীনদের প্রভাব থেকে যাবে। ফলে সুষ্ঠু ভোট নিয়েও শঙ্কা থেকে যাবে।

এমন প্রেক্ষাপটে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ভূমিকা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে বিষয়ে সতর্ক করে দেন সিইসি নুরুল হূদা।

তিনি বলেন, “আপনাদের ব্যক্তিগত ব্যর্থতার কারণে নির্বাচন যেন কখনও প্রশ্নবিদ্ধ না হয়- সে দায়িত্ব আপনাদের পালন করতে হবে। একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এই দেশে উপহার দিতে হবে। সেই গুরু দায়িত্ব আপনাদের পালন করতে হবে।”

নির্বাচনের প্রার্থী ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেও রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন সাবেক এ আমলা।

তিনি বলেন, “৩০ তারিখ সামনে রেখেই নির্বাচনের সার্বিক দায়িত্ব পালনের জন্য আপনাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সহকারী রিটার্নিং অফিসার আপনার ঘনিষ্ঠ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করবে। তাদের সাথে মিটিং করবেন। জেলা উপজেলা কর্মকর্তাদের সাথে মিটিং করবেন।”

‘রিটার্নিং কর্মকর্তারাই নির্বাচন কমিশন’

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিয়ে এই ব্রিফিংয়ে সিইসি মেধা ও প্রজ্ঞা ব্যবহার করে একাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার নির্দেশনা দেন।

তিনি বলেন, “নির্বাচন পরিচালনার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আপনাদের। কিছু ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আপনাদের পরামর্শ দেবে। ৯৫ ভাগ দায়িত্ব সাংবিধানিকভাবে আপনাদের ওপর অর্পিত। নির্বাচন কীভাবে পরিচালনা করবেন- সব দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা নির্বাচন কমিশনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বলা যায়, আপনারাই নির্বাচন কমিশন।” 

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা থাকলে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে জনগণের সন্দেহের কোনো কারণ থাকবে না মন্তব্য করে সিইসি বলেন, “জনগণের ভোটের অধিকার নির্বাচন কমিশনের পবিত্র আমানত। জনগণ যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সে দায়িত্ব আপনাদের গ্রহণ করতে হবে।”

‘গাফিলতি হলে ব্যবস্থা, ভয়ভীতি নয়’

রিটার্নিং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ব্রিফিংয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, “নির্বাচনী ব্যবস্থাপনায় নিশ্চয়তা, নিরপেক্ষতা, নিরাপত্তা, নিয়ম-নীতি ও নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। এখন আপনাদের দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের ওপর জাতির আশা-আকাঙ্খা নির্ভর করছে।”

মাঠ পর্যায়ে ভোটের দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তাদের ‘বিচারকের মতো নির্দ্বিধায়, নিঃসঙ্কোচে’ দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘আত্মমর্যাদা সমুন্নত রাখার নির্বাচন’ হিসেবে বর্ণনা করে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, “আমরা কোনোভাবেই এ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে দিতে চাই না। জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলছি। কোনো প্রকার শিথিলতা আমরা মেনে নেব না।”

নির্বাচনে গাফিলতির জন্য কঠোর শাস্তির বিধান প্রয়োগ করতেও নির্বাচন কমিশন দ্বিধা করবে না বলে তিনি সতর্ক করেন।

ভয়-ভীতিসহ সব কিছুর ঊর্ধ্বে থেকে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পরামর্শ দিয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, “আপনাদের সাফল্যের ওপর এই নির্বাচন কমিশনের সাফল্য নির্ভর করছে। একটি আইনানুগ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনই নির্বাচন কমিশনের সাফল্য “

নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্বাচন কশিনের ‘চালিকাশক্তি’ অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, “শুধু নির্বাচন কমিশন নয়, দেশবাসীও চাইবে আপনারা যে গুরুদায়িত্ব পালন করবেন তা যেন নির্ভেজাল হয়। দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রেখে সততার সাথে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব আপনাদের।”

নির্বাচনী আইন-বিধি নিয়ে এ ব্রিফিংয়ে ৬৬ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে ৬৪ জন জেলা প্রশাসক, বাকি দুজন ঢাকা ও চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার।