নির্বাচনকালীন সরকার শুধুই ‘নাম’

একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ‘নির্বাচনকালীন সরকারের’ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্পষ্ট কোনো ঘোষণা না এলেও তফসিল ঘোষণার পর থেকেই ‘ওই সরকারের’ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে বলে মনে করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “শিডিউল ঘোষণার শুরু থেকেই বলতে হয়, এই সরকার নির্বাচনকালীন সরকার। কনস্টিটিউশনে ওভাবে লেখা নেই আসলে, এমনিই।”

সেই সঙ্গে তিনি বলেন- “সরকার রেগুলার সরকারই আছে। এগুলো (নির্বচনকালীল বা অন্তবর্তীকালীন সরকার) আমাদের দেওয়া নাম, এগুলো কিন্তু কনস্টিউশনাল নাম না।”

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা এখন সংবিধানে নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন হয়। ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণ গণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন; যার নাম দেওয়া হয় ‘সর্বদলীয় সরকার’।

ওই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদের নেওয়া হয়। স্বল্প পরিসরের ওই মন্ত্রিসভা সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে।

গত ২২ অক্টোবর গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান মন্ত্রিসভায় ‘সব দলের’ প্রতিনিধিই আছেন। আর নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। ফলে এবার নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করছেন না।

কিন্তু তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতির মধ্যেই গত ৬ নভেম্বর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ায় সরকারের টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীদের পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সে অনুযায়ী ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈ‌দে‌শিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএস‌সি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযু‌ক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার পদত্যাগপত্রও জমা দেন। কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রী আবার তাদের অফিস চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেন।

এরপর গত বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা আগে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার কেমন হবে, শুক্রবারই তা জানা যেতে পারে। এবার মন্ত্রিসভায় নতুন করে কাউকে অন্তর্ভুক্ত করা নাও হতে পারে বলে সেদিন তিনি ইংগিত দেন।

তবে এরপর গত চার দিনে সরকারের তরফ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার বা মন্ত্রিসভার পরিবর্তন নিয়ে কিছু জানানো হয়নি। 

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তিনি এ বিষয়ে কোনো নির্দশনা পাননি। তবে তফসিল যেহেতু হয়ে গেছে, সেহেতু বর্তমান সরকারকেই ‘নির্বাচনকালীন সরকার’ বলার পক্ষপাতী তিনি।

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে শফিউল আলম বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় আইনের খসড়া অনুমোদনে কোনো বাধা নেই।

“আইন অনুমোদন কেবিনেটের কার্যক্রমের মধ্যেই পড়ে, রুটিনই বলা যায় এটা। এটাতে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পকে স্পর্শ করে না।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, চার টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী পদত্যাগপত্র দিলেও তা গ্রহণ করে গেজেট জারি না হওয়া পর্যন্ত তাদের মন্ত্রিত্ব বহাল থাকবে।

ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এদিন মন্ত্রিসভাও বৈঠকেও উপস্থিত ছিলেন বলে জানান তিনি।

তাদের পদত্যাগপত্র কবে গৃহীত হতে পারে- এমন প্রশ্নে শফিউল বলেন, “এটা আমার বলা মুশকিল।”