একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ৮ নভেম্বর

বাংলাদেশের মানুষ কবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবে, সেই তারিখ নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করবে আগামী ৮ নভেম্বর।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2018, 01:13 PM
Updated : 4 Nov 2018, 05:23 PM

রোববার বিকালে ৩৯ তম কমিশন সভায় এই তারিখ চূড়ান্ত করা হয় বলে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী জানান।

কমিশন সভার পর এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, “আমরা ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ওইদিন অপরাহ্নে জাতির উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার ভাষণের মাধ্যমে সংসদ নির্বাচনের বিস্তারিত তফসিল ঘোষণা করা হবে।”

সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বেতার ও টেলিভিশনে জতির উদ্দেশ্যে সিইসির দেওয়া ভাষণে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপ শেষ হওয়ার আগে তফসিল ঘোষণা না করতে নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ করেছিল কামাল হোসেনের জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

আর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, তফসিল ঘোষণার সময় ঘনিয়ে আসায় ৭ নভেম্বরের পর আর কোনো সংলাপ তারা রাখতে চান না।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, “৪ নভেম্বর আমাদের তফসিল দেওয়ার কথা ছিল। এখন সব কিছু বিবেচনা করে ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হবে।”

অধ্যাদেশ জারির চার দিনের মাথায় রোববার ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে বিধিমালাও চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। এখন আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং শেষে তা গেজেট আকারে জারি করবে ইসি সচিবালয়।

শাহাদাত চৌধুরী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, এবার নির্বাচনে স্বল্প পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। তবে কতটি আসনে তা ব্যবহার করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম চালুর আট বছর পর এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে এ প্রযুক্তি ব্যবহার হতে যাচ্ছে।

২০১০ সালের জুন মাসে স্বল্প পরিসরে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ইভিএম চালু হয়। ২০১৫ সালে এসে ওই ইভিএম বন্ধ হয়ে যায়। পরে নতুন ইভিএম তৈরি করে ইসি; তা চালু হয় ২০১৬ সালে রংপুর সিটি নির্বাচনে।

বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার মধ্যেই সম্প্রতি সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে তা জারি করা হয়। আর নির্বাচনে কীভাবে তা ব্যবহার করা হবে, সে বিষয়ে খুঁটিনাটি চূড়ান্ত করে রোববার কমিশন সভায় অনুমোদন করা হয় বিধিমালা।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন রোববারের কমিশন সভায়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাহাদাত চৌধুরী বলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্র নিয়ে হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশনা ইসি প্রতিপালন করবে। তবে বিষয়টি কতদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে তা নিশ্চিত করতে পারেননি এ নির্বাচন কমিশনার।

“তফসিল ঘোষণার আগে নিষ্পত্তি করা হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত হয়নি। যেহেতু আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনের বিষয় রয়েছে, বাধ্যবাধকতা রয়েছে, খুব শিগগিরই তা আমরা করব।”

বিএনপির গঠনতন্ত্রের সপ্তম ধারায় বলা ছিল, দুর্নীতি পরায়ণ ব্যক্তি বিএনপির নেতা বা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবে না। গত ফেব্রুয়ারিতে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতি মামলার সাজায় কারাগারে যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে ওই ধারা বাদ দিয়ে বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়।

ওই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে মোজাম্মেল হোসেন নামে এক ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে একটি আবেদন করেন। পাশাপাশি তিনি হাই কোর্টে এ বিষয়ে একটি রিট আবেদন করেন।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাই কোর্ট গত ৩১ অক্টোবর মোজাম্মেলের আবেদন এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি ওই আবেদন নিষ্পত্তি হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

দুর্নীতির দুই মামলায় ১০ ও ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত আট মাস ধরে কারাবন্দি। আর তার বড় ছেলে তারেক রহমান দুর্নীতির দুই মামলায় ৭ ও ১০ বছর এবং হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার রায় মাথায় নিয়ে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশের আইনের দৃষ্টিতে তিনি এখন পলাতক।

বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি মামলায় কারও ন্যূনতম দুই বছর কারাদণ্ড হলে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য হবেন। কিন্তু বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে এবং উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ ও নজির রয়েছে।

এই অবস্থায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আসন্ন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কি না সে প্রশ্ন এড়িয়ে যান নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত চৌধুরী।

অন্যদের মধ্যে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও জনসংযোগ পরিচালক যুগ্মসচিব এস এম আসাদুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

এবার ৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল

সাধারণত তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট পর্যন্ত ৪০-৪৫ দিন সময় লাগে। সর্বশেষ দশম সংসদ নির্বাচনে ৪২ দিন সময় রেখে ভোটের তফসিল হয়েছিল।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিলে ৪৫ দিন সময়কে ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মেনে ভোটের সময়সূচি ঘোষণা করা হচ্ছে বলে জানান শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।

যে ইংগিত তিনি দিয়েছেন, তাতে ভোট হতে ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে। তবে ভোট, মনোনয়নপত্র দাখিল, বাছাই, প্রত্যাহার ও ভোটের তারিখ তফসিলের সঙ্গেই ঘোষণা করা হবে বলে জানান এই নির্বাচন কমিশনার।