দাবি না মানলে ফের ধর্মঘট: হুমকি পরিবহন শ্রমিক নেতা ওসমান আলীর

আটচল্লিশ ঘণ্টার ধর্মঘট শেষ হওয়ার আগে পরিবহন শ্রমিক নেতা ওসমান আলী বলেছেন, তাদের দাবি মেনে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন না হলে আগামী মাসে ফের একই ধরনের কর্মসূচি দেবেন তারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকও সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2018, 01:01 PM
Updated : 29 Oct 2018, 02:50 PM

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সড়কে শৃঙ্খলা আনতে সড়ক নিরাপত্তা আইন সরকার প্রণয়ন করার পর তার বিরোধিতায় নামেন পরিবহন শ্রমিকরা।

রোববার সকাল ৬টা থেকে তাদের ধর্মঘটে অচল হয়ে আছে সারাদেশের সড়ক; বাস না পেয়ে দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ। বিভিন্ন স্থানে পরিবহন শ্রমিকরা সাংবাদিক ও মোটর বাইক চালকদের হেনস্তাও করেন।

মঙ্গলবার ভোর ৬টায় শেষ হচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কর্মসূচি।

তাদের পরবর্তী কর্মসূচি জানতে চাইলে ফেডারেশেনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী সোমবার সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কাল আমাদের কর্মসূচি আপাতত শেষ। এরপর আবার আমরা সরকারকে নোটিস দেব। ২১ দিনের মধ্যে যদি সরকার দাবি না মানে তাহলে ৯৬ ঘণ্টার কর্মসূচি দেব।”

পূর্ব  নির্ধারিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩ নভেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে নোটিস দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদ আর বসছে না বলে পরিবহন শ্রমিকদের দাবি মেনে আইন সংশোধনের সুযোগ নেই বলে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। 

তবে শ্রমিক নেতা ওসমান আলী মনে করেন, সরকার চাইলেই তা করতে পারে।

“আইন বানাতে সংসদ লাগে না। অধ্যাদেশ জারি করে পরবর্তী পার্লামেন্টে পাস করালেই হয়। ১৯৮৩ সালে এরশাদ সাহেব অধ্যাদেশ জারি করে মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট সংশোধন করেছেন। রাষ্ট্রপতি যদি তিনবারের ফাঁসির আসামিকে এক স্বাক্ষরে মাফ করে দিতে পারেন, তাহলে আমরা ৭০ লাখ পরিবহন শ্রমিকের পক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কি একটা অধ্যাদেশ জারি করে শ্রমিকদের রেহাই করে দিতে পারে না?”

পরিবহন ধর্মঘটের প্রতিবাদে সুনামগঞ্জে যাত্রী সংগঠনের মানববন্ধন

শ্রমিকদের এই আন্দোলন নিয়ে শুরু থেকেই নীরব পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, যিনি নৌমন্ত্রীর দায়িত্বে রয়েছেন।

সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকেও তিনি ছিলেন না। নিজের ভাগ্নে মারা যাওয়ায় খবর পেয়ে সকালেই তিনি মাদারীপুর চলে যান বলে নৌমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শাজহান খানের ভাগ্নে মারা যাওয়ার কথা মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে বাসচাপায় দুই কলেজশিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলিয়ে রাখা সড়ক পরিবহন আইন পাস করে।

কিন্তু ওই আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে সেগুলো বাতিল করার দাবি তুলেছেন পরিবহন শ্রমিকরা।

তাদের দাবিগুলো হলো- সড়ক দুর্ঘটনার সব মামলা জামিনযোগ্য করা, দুর্ঘটনায় চালকের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল, চালকের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণির পরিবর্তে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত করা, ৩০২ ধারার মামলার তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি রাখা, পুলিশি হয়রানি বন্ধ, ওয়ে স্কেলে জরিমানা কমানো ও শাস্তি বাতিল এবং গাড়ি নিবন্ধনের সময় শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিনিধির প্রত্যয়ন বাধ্যতামূলক করা।

‘ধর্মঘটের নামে নৈরাজ্য’

ধর্মঘটের নামে পরিবহন শ্রমিকরা সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে বলে সংসদে অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান।

এ বিষয়ে সরকারের পুলিশ প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে দাবি করে সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি চেয়েছেন তিনি।

ঢাকার কেরানীগঞ্জের ইকুরিয়ায় ধর্মঘটী পরিবহন শ্রমিকরা ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলেও বাধা দেয়, চালকের মুখে মেখে দেয় কালি। ছবি: আব্দুল্লাহ আল মমীন

সোমবার সংসদের বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় পীর ফজলুর রহমান বলেন, “এই সংসদে পাস করা সড়ক পরিবহন আইনের কিছু ধারা পরিবর্তনের দাবিতে গত দুই দিন থেকে পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করছে। এই অবরোধের নামে শ্রমিকদের কেউ কেউ যে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। বিভিন্ন স্থানে যাত্রী ও চালকদের মুখে পোড়া মবিল দিয়ে লেপ্টে দেওয়া হয়েছে। একটি অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেওয়ায় মারা গেছে।

“এই অবরোধে সারাদেশের মানুষের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অবরোধের নামে মানুষের আত্ম মর্যাদায় যারা আঘাত করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নীরব রয়েছে। এই ঘটনা আমাদের আহত করেছে।”