ইভিএমের পথ খুলছে অধ্যাদেশে

রাজনৈতিক অঙ্গনের একটি অংশের বিরোধিতার মধ্যেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের পথ তৈরি করল সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2018, 09:37 AM
Updated : 31 Oct 2018, 04:05 PM

ব্যালট পেপারে প্রচলিত পদ্ধতিতে ভোটের পাশাপাশি ইভিএম ব্যবহারের সুযোগ রেখে সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের খসড়ার নীতিগত ও চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

নির্বাচনের আগে সংসদে তুলে পাস করার জন্য যথেষ্ট সময় না থাকায় সংশোধিত এই গণপ্রতিনিধিত্ব আইন অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “এই আইনটি অর্ডিন্যান্স আকারে জারি হয়ে যাবে, এখন তো সংসদ আর পাওয়া যাবে না।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার এ বৈঠক হয়। পরে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সামনে এ আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর আমলে ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপলস অর্ডার, ১৯৭২’ জারি করা হয়। ওটাকে সংশোধনের জন্য ‘রিপ্রেজেন্টেশন অব দ্য পিপলস (অ্যামেন্ডমেন্ট) অ্যাক্ট, ২০১৮’ নামে আনা হয়েছে। আরপিও সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এছাড়া সংশোধিত আইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ এবং বিদ্যমান ব্যবস্থার পাশাপাশি অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলেরও সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানান শফিউল।

আগে মনোনয়নপত্র দাখিলের সাত দিন আগে প্রার্থীদের খেলাপী ঋণ পরিশোধ করতে হত এবং মনোনয়নপত্র জমা দিতে হত হাতে হাতে।

কেন মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে- এ প্রশ্নে শফিউল বলেন, “এটার মাধ্যমে প্রার্থীকে একটু ফেসিলেটেড করা হল। আপনি যত সুযোগ বাড়াবেন তত ঋণ খেলাপি কমে যাবে, ক্লিন হয়ে যাবে। আমাদের ঋণ আদায় বেশি হবে।”

সংশোধিত আইনে ইভিএমের ‘অপব্যবহার’ করলে সর্বনিম্ন তিন বছর এবং সর্ব্বেচ্চ সাত বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

তিনি বলেন, “ইভিএম ব্যবস্থা প্রবর্তন, ইভিএম অনুমোদন, ইভিএমের সফটওয়্যার অনুমোদন এবং সার্বিক নিরাপত্তার জন্য কমিশনের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। অনেকগুলো সেফটি মেজার্স এখানে প্রস্তাব করা হয়েছে।

“অর্থাৎ ইভিএম নিয়ে মানুষের মধ্যে যে একটা ভীতি কাজ করছে, এটার নিরাপত্তা কী হবে, এটা হ্যাকিংয়ের শিকার হবে কি হবে না, এই শঙ্কাগুলো দূর করার জন্য নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত বলে দেওয়া আছে।”

কোনো নেটওয়ার্কের সঙ্গে ইভিএমের কোনো সম্পর্ক থাকবে না জানিয়ে শফিউল বলেন, “হ্যাক করার কোনো সুযোগ এখানে থাকবে না। টেম্পারিং ও ম্যানিপুলেশন প্রতিরোধ সম্পন্ন ইলেকট্রনিক ব্যবস্থা থাকবে। সব ধরনের সেফটি মেজার্স এখানে রাখা হয়েছে, যাতে কোনো নাগরিক ভোট দিতে গিয়ে প্রতারিত বা বঞ্চিত না হয়।”

শফিউল জানান, কতটি স্থানে ইভিএম ব্যবহার করা হবে সেই এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে এবং ইভিএম ব্যবহার বাধ্যতামূলকও নয়।

এর আগে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হলেও জাতীয় নির্বাচনে যন্ত্রে ভোটগ্রহণের সুযোগ ছিল না। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে আসছিলেন, তিনি চান ইভিএম ব্যবহার হোক।

অন্যদিকে ইভিএমের বিরোধিতা করে আসা বিএনপি বলে আসছে, আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের পক্ষে ‘ভোট জালিয়াতি’ করতেই নির্বাচন কমিশন ইভিএম চালুর তোড়জোড় শুরু করেছে।

বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিরোধিতা করলেও গত ৩০ অগাস্ট নির্বাচন কমিশন আরপিও সংশোধনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের প্রস্তাব যাচাইয়ের জন্য তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন।

ইসির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে আইন মন্ত্রণালয় তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠালে সোমবার তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হয়। 

মন্ত্রিসভার বৈঠক নিয়মিত চলবে

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে মন্ত্রিসভা ছোট হোক বা না হোক মন্ত্রিসভার বৈঠক অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়নি, আরেকটু সময় আছে হাতে, এজন্য আলোচনা এখনও…।”

শফিউল বলেন, “কেবিনেট চলবে, কেবিনেটের কোনো সমস্যা নাই। অন্তবর্তীকালীন সরকার বা যাই বলেন আগেও কেবিনেট হয়েছে, এখনও হবে ইনশাআল্লাহ। কেবিনেট বন্ধ থাকার কোনো কারণ নেই।”

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতরা এতদিন বলে আসছিলেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের মত ছোট আকারের ‘নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা’ গঠন করা হবে।

তবে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবার পরিস্থিতি আলাদা, ফলে নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা ছোট করা নাও হতে পারে।