খালেদার অনুপস্থিতিতে বিচার: আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত সোমবার

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলবে কিনা সে বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত জানা যাবে সোমবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2018, 08:28 AM
Updated : 28 Oct 2018, 03:13 PM

হাই কোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিলে শুনানি শেষে রোববার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচাপতির আপিল বেঞ্চ বিষয়টি সোমবার আদেশের জন্য রেখেছে।

রোববার আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন এ জে মোহাম্মদ আলী; সঙ্গে ছিলেন জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল ও এ কে এম এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান।

এদিকে ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে সোমবারই এ মামলার রায় হওয়ার কথা রয়েছে। জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে সোয়া তিন কোটি টাকা লেনদেনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে এ মামলায় সর্বোচ্চ সাত বছর সাজা হতে পারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার।

আপিল বিভাগে শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “কাল বিচারিক আদালতের রায় হবে কিনা তা নির্ভর করছে আপিল বিভাগের আদেশের ওপর।”

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আশা করছি লিভ টু আপিল খারিজ হবে।”

আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের জন্য বিচারিক আদালতের রায় আটকাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কাল রায় হবে কি হবে না সেটা বিচারিক আদালতের এখতিয়ার।”

এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “যদি এ মামলায় আপিল বিভাগে কোনো রকম লিভ দেওয়া হয়, তাহলে বিচারিক আদালত কর্তৃক মামলার রায় প্রদান অনিশ্চিত হয়ে যাবে। আর যদি খালেদা জিয়ার আবেদনটি আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে যায় তবে আগামীকাল রায় দেওয়া সম্ভব হবে।”

এ মামলার প্রধান আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি।

‘অসুস্থতার কারণে’ তাকে সাত মাসে একবারও তাকে আদালতে হাজির করতে না পারায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করতে সরকারের নির্দেশে আদালত স্থানান্তর করা হয় ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারের ভেতরে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর বিশেষ জজ আদালতের ওই অস্থায়ী এজলাসে হাজির হয়ে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে খালেদা জিয়া বিচারককে বলেছিলেন, তিনি বার বার আদালতে আসতে পারবেন না, বিচারক তাকে ‘যতদিন খুশি’ সাজা দিতে পারেন।

এরপর শুনানির দুটি তারিখে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে আদালত কক্ষে আনতে ব্যর্থ হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারা অনুযায়ী তার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চালানোর আর্জি জানান দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান ১০ অক্টোবর তার আদেশে বলেন, “এক বছর ৯ মাস মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে থাকায় এবং আসামি বেগম খালো জিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে হাজির না হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারায় প্রসিকিউশনের দরখাস্তটি ন্যায়বিচারের স্বার্থে গ্রহণ করা যায়।”

এ মামলায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত হাজিরা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য মওকুফ করে তার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম যথারীতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে বিচারক বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা চাইলে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারবেন।

ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে খালেদার পক্ষে তার আইনজীবীরা গত ২৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন। জজ আদালতের ওই আদেশ কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে রুল চাওয়ার পাশাপাশি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত চওয়া হয় সেই আবেদনে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির হননি। সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে তার সুস্থতা সবার আগে দেখা উচিত। আর তিনি যেহেতু কারাবন্দি, সেহেতু তার অনুপস্থিতিতে এ মামলার বিচার চালানো যায় না।

কিন্তু বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ গত ১৪ অক্টোবর খালেদার রিভিশন আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিলে জজ আদালতের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।

এরপর গত ১৮ অক্টোবর হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা। সে আবেদনর ওপর শুনানি শেষ করেই সোমবার আদেশের তারিখ রেখেছে আপিল বিভাগ।

এদিকে কয়েকটি ধার্য তারিখে আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন না করায় ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান গত ১৮ অক্টোবর এ মামলার বিচারিক কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করে ২৯ অক্টোবর রায়ের দিন রাখেন।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক।

মামলার চার আসামির মধ্যে খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী পলাতক। হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আছেন কারাগারে।