কবি শামসুর রাহমানের জন্মদিন মঙ্গলবার

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি শামসুর রাহমানের জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে মঙ্গলবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2018, 05:52 AM
Updated : 23 Oct 2018, 05:52 AM

মুক্তিযুদ্ধ, অসাম্প্রদায়িকতা আর মুক্ত চেতনায় বাংলাদেশের হৃদয় হয়ে ওঠা এই কবি বেঁচে থাকলে এদিন তার বয়স হত ৮৯ বছর।

১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকার মাহুতটুলীতে জন্ম নেন শামসুর রাহমান। নগর মানসের প্রেম আর দ্রোহকে তিনি বেঁধেছিলেন শব্দের জালে, নিজেকে সমর্পিত করেছিলেন কবিতায়।

কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মঙ্গলবার নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

সকালে বনানী কবরস্থানে কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, গান ও কবিতা আবৃত্তি ছাড়াও বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভার।

শামসুর রাহমান একাধারে কবি, সাংবাদিক, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক ও গীতিকার। গত শতকের পঞ্চশের দশক থেকে বিরামহীন তার কলম চলেছে প্রায় ছয় দশক। এই পথযাত্রায় তিনি হয়ে ওঠেন ‘কবিতার রাজপুত্র’। 

জন্ম এই ঢাকা শহরে, এই নগরেই তার বেড়ে ওঠা। পড়ালেখার শুরু পোগোজ স্কুলে। শামসুর রাহমানের কবিতায় নাগরিক জীবনের আনন্দ বেদনার কথা যেমন এসেছে, তেমনি তা ধারণ করেছে সংগ্রামী বাঙালির গৌরবদীপ্ত ইতিহাস।

ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে শামসুর রাহমানের লেখনী ছিল সোচ্চার। 

'আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা' কিংবা শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে লেখা 'বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়' স্বাধীনতা আর গণতন্ত্রকামী বাঙালিরই প্রাণের কথা।

গদ্য কবিতার দুর্বোধ্যতার দেয়াল ভেঙে শামসুর রাহমানের সহজ অথচ ধারালো পংক্তি পৌঁছে গেছে সব ধরনের পাঠকের হৃদয়ে।

প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬০ সালে। এরপর নিজ বাসভূমে', 'বন্দী শিবির থেকে', 'দুঃসময়ে মুখোমুখি', 'ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাঁটা', 'বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে', 'ইকারুসের আকাশ', 'উদ্ভট উটের পিঠে চলেছে স্বদেশ', 'যে অন্ধ সুন্দরী কাঁদে', 'অস্ত্রে আমার বিশ্বাস নেই', 'দেশদ্রোহী হতে ইচ্ছে করে', 'বুক তার বাংলাদেশের হৃদয়', 'ভস্মস্তূপে গোলাপের হাসি'সহ শতাধিক গ্রন্থে তিনি ঋদ্ধ করে গেছেন বাংলা সাহিত্যকে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে লেখাপড়া শেষ করে ১৯৫৭ সালে ডেইলি মর্নিং সানে শামসুর রাহমানের কর্মজীবন শুরু হয়। পরে রেডিওতেও বছর দেড়েক কাজ করেন।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর দৈনিক বাংলায় যোগ দেন শামসুর রাহমান। তিনি পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদকও হয়েছিলেন। তার সম্পাদনায় বেশ কিছুদিন প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক বিচিত্রা। মূলধারা ও অধূনা নামে দুটি সাহিত্য পত্রিকাও তিনি সম্পাদনা করেন।

বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, আদমজী পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, জীবনানন্দ পুরস্কারসহ বহু সম্মননায় ভূষিত হয়েছেন শামসুর রাহমান।

আনন্দবাজার পত্রিকা ১৯৯৪ সালে তাকে আনন্দ পুরস্কার দেয়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৪ সালে এবং রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৬ সালে তাকে সম্মানসূচক ডি লিট উপাধি দেয়।

২০০৬ সালের ১৭ অগাস্ট শব্দের মায়া কাটিয়ে চিরবিদায় নেন বাংলাদেশের এই অন্যতম প্রধান কবি।