নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নতুন ভাবনা

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এবার মন্ত্রিসভার আকারে বড় কোনো পরিবর্তন নাও আনা হতে পারে বলে ইংগিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Oct 2018, 11:14 AM
Updated : 22 Oct 2018, 01:49 PM

তিনি বলেছেন, বর্তমান মন্ত্রিসভায় ‘সব দলের’ প্রতিনিধিই আছেন। আর নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট করা হলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

সোমবার গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী তার এই ভাবনার কথা তুলে ধরেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বলে আসছিলেন, ২০১৩ সালের মত এবারও ভোটের আগে ‘ছোট পরিসরের নির্বাচনকালীন’ মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। চলতি বছরের শুরুতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নিজেও তেমনই আভাস দিয়েছিলেন।

দৈনিক আমাদের নতুন সময়ের সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান, বর্তমানের বড় পরিসরের মন্ত্রিসভা আর কতদিন কাজ করবে এবং কবে সেই নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা হবে।

উত্তর দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, “কী যে ছোট করব সেটাই খুঁজে পাচ্ছি না। বড় থাকলে অসুবিধা আছে?”

নাঈমুল ইসলাম খান তখন বলেন, আইনে কোনো সমস্যা নেই।

প্রধানমন্ত্রী তখন বলেন, “আইনেও নাই, কোথাও নাই।”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ছোট আকারের মন্ত্রিসভা করার কারণ ব্যাখ্যা করে শেখ হাসিনা বলেন, “২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে আমরা যেহেতু চেয়েছিলাম, আমরা সব দল এক হই। তখন খালেদা জিয়া বিরোধী দলের নেত্রী ছিল। তাকেও আমি আহ্বান করেছিলাম। কারণ তারা নির্বাচনে আসতে চাচ্ছিল না।

“তাদের আনার জন্য আমি বলেছিলাম যে, আসেন আমরা সকলে মিলে একটা সরকার গঠন করি, তাহলে কারও কোনো চিন্তা থাকবে না। যে কোনো মিনিস্ট্রি চাইলে আমি দিতে রাজি ছিলাম। তাদেরকে নিয়ে করতে চেয়েছিলাম। তখন তারা আসল না। বিরোধীদলে অন্য যারা ছিল, তাদেরকে নিয়ে আমি মন্ত্রিসভা গঠন করি। সেই মন্ত্রিসভা ছোট আকারে আমরা করেছিলাম, ইলেকশনটা আমরা সেভাবে করি।”

আর গতবারের সঙ্গে এবারের পরিস্থিতির পার্থক্য বোঝাতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “মেজরিটি পাওয়া সত্ত্বেও আমরা আমাদের যারা প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলি পার্লামেন্টে আছে, সব দল থেকে নিয়েই কিন্তু একটা মন্ত্রিসভা গঠন করেছি। ইতোমধ্যে কিন্তু সেই মন্ত্রিসভা নিয়েই চলছি। আগে এটা ছিল না, আগে শুধু আওয়ামী লীগের ছিল। এখন যারা জনগণের প্রতিনিধি, তাদের সকল প্রতিনিধিকে নিয়েই কিন্তু মন্ত্রিসভা হয়ে গেছে।”

প্রধানমন্ত্রী জানান, নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিয়ে তিনি বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গেও কথা বলেছেন। তার মতামত জানতে চেয়েছেন।

“যেহেতু সব দলের প্রতিনিধি আছে, এখন জানি না এটা খুব প্রয়োজন আছে কি না। আর কাটছাঁট করলে তো মন্ত্রীরা… অনেকগুলো প্রজেক্ট আছে….।”

শেখ হাসিনা বলেন, মন্ত্রিসভা ছোট করা হলে একজনকে কয়েকটা মন্ত্রণালয় চালাতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দুই তিন মাসের জন্য থমকে যেতে পারে। এ বিষয়গুলোও ভাবতে হবে।

অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ভারতসহ যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র আছে, তাদের সঙ্গেও এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনের সময় কোথাও মন্ত্রিসভা পরিবর্তন করতে হয় না।

নির্বাচন সামনে রেখে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যদি ডিমান্ড করে অপজিশন, তাহলে করব। আর না হলে কিছু করার নাই।”

১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে যোগ হওয়ার পর সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচন ওই নির্দলীয় সরকারের অধীনে হয়। এর মধ্যে দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে বিএনপি জয়ী হয়। 

২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে রাজনৈতিক সঙ্কটের প্রেক্ষাপটে জরুরি অবস্থা জারির পর সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছর ক্ষমতায় থাকে; তখনই এ পদ্ধতির দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

২০১১ সালের ১০ মে এক রায়ে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেয় সুপ্রিম কোর্ট। ওই বছরই সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার।

শুরু থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের বিরোধিতা করে আসা বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের পাশাপাশি তা ঠেকানোর আন্দোলনে নামে। অন্যদিকে নির্বাচনে জিতে আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করে।

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি জোটের ওই আন্দোলন এবং নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে তাদের তিন মাসের অবরোধে নাশকতায় অন্তত দুইশ মানুষের প্রাণহানি হয়। এবারও তারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের শর্ত দিয়ে রেখেছে।

অন্যদিকে অনির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ বলে আসছে, আগামী নির্বাচনও সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতাসীনদের অধীনেই হবে। তাতে অংশ না নিলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে।  

নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা এখন সংবিধানে নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না, তবে তিন মাসের ক্ষণ গণনা শুরু হলে সংসদের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার অধীনে অপেক্ষাকৃত ছোট একটি মন্ত্রিসভা গঠন করেন; যার নাম দেওয়া হয় ‘সর্বদলীয় সরকার’।

ওই মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলোর নেতাদের নেওয়া হয়। স্বল্প পরিসরের ওই মন্ত্রিসভা সরকারের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে। বিএনপিকে সেই ‘সর্বদলীয়’ সরকারে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও তারা প্রত্যাখ্যান করে।