প্রবাসীদের পরিবারদের লক্ষ্য করে প্রতারণার জাল

ঢাকার বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ঢুকে প্রতারণার ফাঁদ পেতে ডলার, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

লিটন হায়দার অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2018, 07:51 PM
Updated : 22 Oct 2018, 10:47 AM

তানিয়া শিকদার ওরফে নদী ওরফে ডা. নওশীন ওরফে সাদিয়া রহমান নানা নামে পরিচয় দেওয়া ৩২ বছর বয়সের এই নারী এর আগেও একই অভিযোগে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন।

শুক্রবার ভোরে ঢাকার উত্তরা এলাকার একটি বাসা থেকে তাকে ফের গ্রেপ্তারের পর পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, এই নারী জামিনে বেরিয়ে আবারও প্রতারণা ফাঁদে ফেলেছিলেন অনেককে।

প্রবাসে কেউ অবস্থান করছে এমন ব্যক্তির ঢাকায় বসবাসরত পরিবারই এই নারীর লক্ষ্য বলে পুলিশ জানিয়েছে।

তার বিরুদ্ধে রাজধানীর তেজগাঁও থানায় ছাড়াও উত্তরা পশ্চিম থানা, শাহজাহানপুর থানা, মোহাম্মদপুর থানা, কাফরুল থানাসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত একডজন মামলা রয়েছে।

সর্বশেষ গত অগাস্টে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেলেও কয়েকদিন পর জামিনে বেরিয়ে আসেন।

শুক্রবার রাতে যে অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই ঘটনা গত জুলাই মাসের।

তেজগাঁও থানার এসআই মোশারফ হোসাইন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নুরুজ্জামান শাহ নামে একজন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী গত ১৬ জুলাই দেশে এসে পশ্চিম নাখালপাড়ার শ্বশুর বাসায় উঠেছিলেন। পরদিন দুপুরে এই নারী নিজেকে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ডা. ডালিয়া পরিচয় দিয়ে ওই বাসায় যান।

নুরুজ্জামান শাহ’র স্ত্রীর বড় বোনের স্বামী হাসানুল হক শুভ ইংল্যান্ড প্রবাসী। শুভকে এই মহিলা চেনেন বলে দাবি করেন। নাখালপাড়ায় গরিব মানুষকে সাহায্য ও একটি বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছেন বলে নুরুজ্জামান ও তার শ্বশুরকে জানান তিনি।

এসআই মোশারফ বলেন, “ওই মহিলা তাদের সাথে নানা কথা বলে অল্প সময়ের মধ্যে আন্তরিকতা গড়ে তুলে। এক পর্যায়ে তার ব্যাগ থেকে একশ ডলার বের করে নুরুজ্জামান শাহ’র কাছে ভাংতি চান। ডলার ভাংতি করতে নুরুজ্জামান শাহ তার কক্ষে ঢুকে টাকা রাখার ব্যাগ নিয়ে এলে মহিলা কৌশল হিসাবে পানি খেতে চান।”

এভাবে ওই নারী নুরুজ্জামানের অর্থ হাতিয়ে নেন।

নুরুজ্জামান থানায় দায়ের করা মামলায় বলেছেন, পরে তারা খবর নিয়ে জানেন ডা. ডালিয়া নামে কাউকে তাদের স্বজন শুভ চেনেন না।

এক রেন্ট-এ-কারের চালকের সূত্র ধরে উত্তরা থেকে এই নারীকে গ্রেপ্তার করা হয় হয় বলে এসআই মোশারফ জানান।

আরেকটি প্রতারণার অভিযোগে উত্তরা পশ্চিম থানায় গত ২৯ অগাস্ট এই নারী বিরুদ্ধে একটি মামলা হওয়ার পর র‌্যাব-১ তাকে গ্রেপ্তার করেছিল।

ওই মামলার বাদী তারেক হায়দার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ৯ অগাস্ট এই নারী তার নানা-নানির কাছে গিয়েছিলেন।

তারেকের মামা অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। ওই ফ্ল্যাটে শুধু তার নানা-নানীই ছিলেন।

তারেক বলেন, মামার বন্ধু রিজভীর বোন পারভীন পরিচয় দিয়ে আন্তরিকতা গড়ে তোলেন ওই নারী। এক পর্যায়ে ওই নারী তার কাছে থাকা কিছু অস্ট্রেলিয়ান ডলার রাখার অনুরোধ করে।

এভাবে ওই বাড়ি থেকেও প্রায় আট লাখ টাকার মালামাল তিনি চুরি করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়।

মিরপুর থানায় একই ধরনের একটি মামলা প্রসঙ্গে তেজগাঁও থানার এসআই মোশারফ বলেন, একই নারী এ বছরের ২৯ জানুয়ারি মিরপুর পাইক পাড়ায় আব্দুল হালিম নামে এ ব্যক্তির বাসায় ঢুকে নিজের নাম ডা. নওশীন বলে জানান।

সেখানে তিনি তার কাছে কিছু গহনা থাকার কথা জানিয়ে প্রতারণার জাল ছড়িয়ে প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণালংকার চুরি করেন বলে জানান এসআই মোশারফ।

শাহজাহানপুর থানায়ও গত ৩ জুলাই একই ধরনের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এই ঘটনাও এই নারীই ঘটিয়েছেন বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে।

মালিবাগের গুলবাগের ওই গৃহকর্তা বৃদ্ধ খলিলুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, তার ছেলের বন্ধুর স্ত্রী পরিচয় দিয়ে দোতালার বাসায় আসেন ওই নারী। তিনি নিজেকে অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কেনার জন্য কিছু টাকাও নিয়ে এসেছেন বলে জানান।

খলিল বলেন, ওই সময় ঘরে থাকা অন্যদের নানা ছুতোয় বাইরে পাঠিয়ে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলেন ওই নারী এবং ৫ লাখ টাকা নিয়ে সটকে পড়েন।

পুলিশ জানায়, এই নারী আসল নাম তানিয়া শিকদার। তার বাবার নাম হাসান শিকদার। তার বাড়ি গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার রাজেন্দ্রপুরের গজারিয়ায়। রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি।

কয়েক বছর আগে তার স্বামীর মৃত্যুর পর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছিল। কিন্তু ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে জানা যায়, আত্মহত্যা।

পরে তানিয়া তার দেবর ওয়ালিদ রহমানকে বিয়ে করেন জানিয়ে এসআই মোশারফ বলেন, এই ওয়ালিদ এখন মাদকাসক্ত। গত শুক্রবার তানিয়ার সঙ্গে ওয়ালিদকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

তানিয়া এক সময় চলচ্চিত্রের সহ নায়িকা হিসেবে কাজ করতেন বলেও এই এসআই জানান।

তানিয়া যে সব গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে বেড়াতেন তার কয়েকজন চালকের সঙ্গেও কথা বলেছে পুলিশ। তাকে বহনকারী একজন চালক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন বলেন পুলিশ কর্মকর্তা মোশারফ।