রোববার ঢাকার আদালতে মাসুদা ভাট্টির পাশাপাশি জামালপুরের আদালতেও মানহানির একটি মামলা হয়।
হাকিম আদালতে দুটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর এদিনই হাই কোর্টে গিয়ে জামিন নেন ব্যরিস্টার মইনুল।
গত ১৬ অক্টোবর রাতে একাত্তর টিভিতে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে জামায়াতের সঙ্গে মইনুলের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন আমাদের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি।
এনিয়ে কথার এক পর্যায়ে মইনুল বলেন, “আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই।”
তবে মইনুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসা মাসুদা ভাট্টি তাতে সাড়া না পেয়ে রোববার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলা করেন।
হাকিমের কাছে জবানবন্দিতে মাসুদা ভাট্টি পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “ওই ঘটনার পর থেকে ফেইসবুক, টেলিফোনে মঈনুল হোসেনের পক্ষ হয়ে নোংরা ভাষায় কথা বলা হচ্ছে। তাকে ক্ষমা চাইতে বললে তিনি চাইলেন না। উল্টো ফেইসবুকে মেসেঞ্জারে তার পক্ষ হয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।”
বাদী মনে করেন, মইনুল হোসেনের এই বক্তব্য তার জন্য মানহানিকর তো বটেই, নারী জাতির জন্যও অবমাননাকর। এটা ভবিষ্যতে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের এবং মানবিকতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
মাসুদা ভাট্টির পক্ষে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীদের নেতা কাজী নজিবুল্যাহ হীরু ও ওমর ফারুক এই ঘটনায় মইনুলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নারী সংগঠনের প্রতিবাদ জানানোর বিষয়টি তুলে ধরে বিবাদীকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারির আবেদন করেন।
এরপর অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম আসাদুজ্জামান নূর অভিযোগ আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। আগামী ২২ নভেম্বর পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করে দেন।
জামালপুরের মামলাটি করেন জেলা যুব মহিলা লীগের আহ্বায়ক ফারজানা ইয়াসমীন লিটা। তিনি নারী হিসেবে নিজের মানহানির অভিযোগ তুলে ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
বাদীর আইনজীবী মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম সোলায়মান কবীর মামলাটি আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মানহানির দুই মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর বিকালে হাই কোর্টে আত্মসমর্পণ করে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মইনুল।
আদালতে মইনুলে পক্ষে ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন, তার সঙ্গে ছিলেন এ কে এম এহসানুর রহমান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন ও বর্তমান সম্পাদক এ এম মাহবুবউদ্দিন খোকনও উপস্থিত ছিলেন। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ।
শুনানির পর বিচারপতি মুহাম্মদ আবদুল হাফিজ ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাই কোর্ট বেঞ্চ মইনুলকে পাঁচ মাসের আগাম জামিন দেন।
জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, “ওই মন্তব্যের জন্য ফোন করে মইনুল হোসেন ক্ষমা চেয়েছেন, লিখিতভাবে সরি বলেছেন। তারপরও তিনি (মাসুদা ভাট্টি) মামলা করেছেন, যা আমরা আশা করিনি।”
এর পেছনে সরকারের যোগসাজশের সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “জামালপুরে যিনি মামলাটি করেছেন, তিনি যুব মহিলা লীগের সদস্য। তাহলে বোঝা যায়, এর পেছনে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে।”
সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসায় মইনুল হোসেন বলেন, “আমি একটি জাতীয় ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি। আমাকে অত্যন্ত অপমান করা হয়েছে ‘জামায়াতের এজেন্ট’ বলে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর কিছু বলব না।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রাফি আহমেদ বলেন, “জামিন আবেদনের বিরোধিতা সত্ত্বেও আদালত তাকে (মইনুল) জামিন দিয়েছেন। হাই কোর্টের এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।”