‘নারী-পুরুষের সমতা আসুক গণমাধ্যমেও’

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে অন্য সব পেশার পাশাপাশি গণমাধ্যমেও যেন নারী ও পুরুষের সমতা আসে, সেই আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছে নারী সাংবাদিকদের একটি সম্মেলন থেকে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2018, 11:32 AM
Updated : 21 Oct 2018, 01:24 PM

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটে (পিআইবি) রোববার বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুসহ অতিথিরা এই আশার কথা বলেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বলেন, ১৯৮৭ সাল থেকে ৩০ বছরে বাংলাদেশে সংবাদকর্মীদের মধ্যে নারীদের হার ৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৩ শতাংশ হয়েছে।

সবাই মিলে চেষ্টা করলে গত ত্রিশ বছরে এই সংখ্যা ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, “চলুন, আজকে আমরা লক্ষ্য ঠিক করি, এই সংখ্যা ৩০ শতাংশে পৌঁছাবে আগামী তিন বছরের মধ্যে।”

তার বক্তব্যের সূত্র ধরে তথ্যমন্ত্রী ইনু বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যমে যতটা অগ্রগতি এই সময়ে হওয়ার কথা ছিল, ততটা হয়নি।

“তিন বছরে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য অর্জন করা উচিত সেজন্যই। ২০৩০ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। সেখানে একটি শর্ত হল, সবক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্য দূর হবে। ৫০-৫০ থাকতে হবে। ২০৩০ এর মধ্যে গণমাধ্যমে ৫০-৫০ থাকতে হবে, সংসদেও থাকতে হবে।“

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক সংখ্যায় সমতা আনার সঙ্গে সঙ্গে দক্ষতা বাড়ানোর ওপরও জোর দেন।

তিনি বলেন, “সংখ্যা বাড়ানোটা একটি বিষয়। গুণগত মান বাড়ানো আরেকটি বিষয়। নারী সাংবাদিকদের সংখ্যা বাড়াতে হলে, একটি কথা আমি স্পষ্ট বলি, দক্ষতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই, প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই।”

সংবাদমাধ্যমের কাজের পরিবেশ নারীবান্ধব হল কি না- সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখার কথা বলেন খালিদী।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, এখন সেই সমস্যাটা বাংলাদেশে, অন্তত গণমাধ্যমে খুব একটি আছে বলে মনে হয় না। থাকলেও সেগুলো মোকাবেলা করা সম্ভব।”

মিলনায়তনে উপস্থিত নারী সাংবাদিকদের উদ্দেশে তৌফিক ইমরোজ খালিদী বলেন, “আপনাদের সংখ্যা অনেক। আপনাদের শক্তি অনেক। আপনারা অনেক বেড়েছেন। আপনারা চাইলে সব কিছু পাল্টে দিতে পারেন।”

 

কাজের ক্ষেত্রে এখন যে নারী সাংবাদিকদের বিষয়ে ধারণার পরিবর্তন এসেছে, সে কথাও অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।

“আগে ধারণা করা হত, তারা নারী ও শিশু বিষয়ক বিটে কাজ করবেন। এখন সেই ধারণা পাল্টে গেছে। এখন তারা সব বিটে কাজ করছেন।”

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, পুরো গণমাধ্যম এবং নারীদের এখন জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

“৩০ শতাংশ যে আমরা করব বলছি, সেটাও করা সম্ভব হবে না, যদি আমরা কুসংস্কার, কূপমণ্ডুকতা, সাম্প্রদায়িকতা ও লিঙ্গ বৈষম্য থেকে বের হয়ে না আসতে পারি। নারী সাংবাদিকদের প্রধান শত্রু হচ্ছে, সাম্প্রদায়িকতা, কূপমণ্ডুকতা, কুসংস্কার ও জঙ্গিবাদ।”

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের উপদেষ্টা সেতারা মূসা

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক

নারী সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের এই জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে দীর্ঘ ১১ বছর পর। সারাদেশ থেকে প্রায় ৪০০ নারী সংবাদকর্মী এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিহত সাংবাদিক, লেখক ও অধিকারকর্মীদের জন্য শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কেন্দ্রের সহসভাপতি দিল মনোয়ারা মনু।

বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতা পথিকৃৎদের একজন সেতারা মূসা এ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন হুইল চেয়ারে বসে।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের এই উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যখন প্রথম সাংবাদিকতা শুরু করি, মুষ্টিমেয় কয়জন ছিল। এটা ১৯৬৭ সালের কথা। আজকে আমি দেখছি, হলটা ভরে গেছে। এটাতে কতো আনন্দ হচ্ছে আমার!”

আশি পেরিয়ে আসা সেতারা মূসা বলেন, “মেয়েরা আজকে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ থাকছে না, তারা বেরিয়ে আসছে এবং তারা কাজ করছে; দেশের জন্য, দশের জন্য।”

আগামী সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের সংখ্যা দ্বিগুণ হবে- সেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন সেতারা মূসা।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে নারী সাংবাদিকদের বর্তমান কাজের পরিবেশ ও তাদের সার্বিক অবস্থানের বিষয়ে তথ্য তুলে ধরেন নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের জাতীয় সম্মেলন অংশ নেন সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা

তিনি বলেন, “আমরা দাবি করি যোগ্যতার ভিত্তিতে নারী সাংবাদিকদের নিয়োগ ও পদোন্নতি। তাদের উপযুক্ত কাজের পরিবেশ ও প্রশিক্ষণের সুযোগ। নারী হওয়ার কারণে যেন কেউ বৈষম্যের শিকার না হন।

“শুধু বৈষম্য বঞ্চনাই নয়, নারী সাংবাদিকরা অনেক সময় যৌন হয়রানিসহ নানা ধরনের লাঞ্ছনার শিকার হয়ে থাকেন। তার উপর রয়েছে নানা ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ চাপ।”

২০০১ সালের ১৩ মার্চ এ সংগঠনের যাত্রা শুরুর সময় বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকের সংখ্যা একশো জনের মত থাকলেও এখন তা এক হাজারের বেশি হয়েছে বলে জানান সভাপতি মিনু।

তিনি বলেন, “সাংবাদিকতায় নারীর অংশগ্রহণ জোরদার হওয়ার পথে বড় বাধা নারীর প্রতি সমাজের পশ্চাৎপদ দৃষ্টিভঙ্গি। আমাদের কাজ নারীর প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনা। নারীদের মনে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ও আস্থা আনা। নারীদের দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলা।”

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের দ্বিতীয় সম্মেলন হয়েছিল ২০০৭ সালের মার্চে। তৃতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে এবার নতুন কমিটি গঠন করা হবে।

উদ্বোধনী অধিবেশনের পর নারী সাংবাদিকদের কাজের ক্ষেত্র ও পরিবেশ নিয়ে একটি কর্মশালা হয়। সবশেষে কর্ম অধিবেশনে বর্তমান কমিটির প্রতিবেদন পেশ, আয়-ব্যয়ের হিসাব অনুমোদন এবং নতুন কমিটি গঠন করার কথা রয়েছে।

নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমার পরিচালনায় উদ্বোধনী অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে কেন্দ্রের কোষাধ্যক্ষ আখতার জাহান মালিক উপস্থিত ছিলেন।