মইনুল হোসেনকে ক্ষমা চাইতে হবে প্রকাশ্যে: মাসুদা ভাট্টি

টেলিভিশন আলোচনা অনুষ্ঠানে কটূক্তির জন্য মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাংবাদিক-কলামনিস্ট মাসুদা ভাট্টি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2018, 05:03 PM
Updated : 17 Oct 2018, 05:30 PM

জরুরি অবস্থার সময় সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মইনুল সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে চরিত্রহীন বলার পর ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সমালোচনার মুখে রয়েছেন।

কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ গঠিত নতুন জোটের অন্যতম উদ্যোক্তা মইনুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি তুলেছেন শতাধিক নারী সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীও।

মঙ্গলবার রাতে একাত্তর টেলিভিশনের একাত্তর জার্নালে মাসুদা ভাট্টির এক প্রশ্নে তাকে নিয়ে ওই মন্তব্য করেন ব্যরিস্টার মইনুল।

মাসুদা ভাট্টি তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, “সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, আপনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত থাকেন। আসলেই আপনি জামায়াতের প্রতিনিধি হিসেবে ওখানে উপস্থিত থাকেন কি না?”

তখন তাকে থামিয়ে দিয়ে মইনুল বলেন, “আপনার দুঃসাহসের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। আপনি চরিত্রহীন বলে আমি মনে করতে চাই। আমার সঙ্গে জামায়াতের কোনো কানেকশন নেই। আপনার এ প্রশ্ন আমার জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। অন্য প্রশ্ন করেন।”

উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা তখন ব্যক্তিগত আক্রমণ এড়াতে বলার পর মইনুল বলেন, “আমাদের জামায়াতের লোক বলে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে। তখন কিছু বলা হচ্ছে না কেন?”

এসময় মাসুদা ভাট্টি বলেন, “আপনি শিবিরের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছেন যে, আপনার সঙ্গে শিবিরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। সেই বক্তব্য এখন সব জায়গায় দেখানো হচ্ছে। সেই কারণেই এখন মানুষ এই প্রশ্ন করছে যে, আপনি জামায়াতের হয়ে এখানে উপস্থিত থাকছেন কি না?”

মইনুল নির্বাচন সম্পর্কে তাকে প্রশ্ন করতে বলেন।

তখন মাসুদা ভাট্টি প্রশ্ন করেন, “বেগম জিয়া যে মামলায় জেল খাটছেন সেই মামলাটি আপনি করেছেন, আপনার সময় করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?”

মইনুল তখন বলেন, “এই জন্যই বলছি, আজকালকার সাংবাদিকরা এমনভাবে দলীয় হয়ে গেছে তারা লেখাপড়া জেনে রাজনীতি করে না। আমাদের সময়ে বারেবারে বলেছি যে, দুর্নীতি দমন কমিশন আমাদের থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন বিচার করছে, এটা আপনে বুঝলেন না।”

মাসুদা ভাট্টিকে নিয়ে মইনুলের ওই ‘মৌলবাদীদের মতো’ মন্তব্যে ফেইসবুকে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়।

নারী সাংবাদিক ও অধিকারকর্মীরা মইনুলকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান। বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)ও একই আহ্বান জানায়।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বুধবার রাতে মইনুল হোসেনর মোবাইলে ফোন করা হলে ‘রাজু আহমেদ’ নামে একজন তা ধরে নিজেকে ব্যারিস্টার মইনুলের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দেন।

তিনি বলেন, “স্যার মিটিংয়ে আছে। এখন কথা বলতে পারবেন না।”

কখন কথা বলতে পারবেন- জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আপনি মাসুদা ভাট্টির বিষয়ে ফোন করেছেন তো? স্যার মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করে ক্ষমা চেয়েছেন। একাত্তর টেলিভিশনের মিথিলা ফারজানাকে চিঠিও পাঠিয়েছেন।।”  

একাত্তরে পাঠানো চিঠিতে মইনুল লিখেছেন, “ক্ষুব্ধ হয়ে রাগের মাথায় তার (মাসুদা ভাট্টি) সম্পর্কে বেফাঁস কিছু মন্তব্য করি। যেটা আমার অজান্তেই হয়েছে। সেজন্য আমি মাসুদা ভাট্টিকে ফোন করে নিজেই দুঃখ প্রকাশ করেছি।”

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আমাদের অর্থনীতির জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সম্পাদক মাসুদা ভাট্টি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিনি আমাকে ফোন করে বলেছেন যে, ‘মনে কিছু করো না, তুমি আমাকে প্রশ্ন করে উত্তেজিত করেছিলে, উত্তেজিত হয়ে আমি ওই কথা বলে ফেলেছি’।

“আমি তাকে বলেছি, এভাবে দুঃখ প্রকাশ করলে হবে না। আমাকে প্রকাশ্যে কটূক্তি করেছেন, আপনাকে প্রকাশ্যেই ক্ষমা চাইতে হবে।”