প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবনমন

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বিচারে গত এক বছরে প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় বাংলাদেশের কিছুটা উন্নতি হলেও বৈশ্বিক সূচকে অবস্থানের অবনমন ঘটেছে এক ধাপ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Oct 2018, 08:06 AM
Updated : 17 Oct 2018, 08:06 AM

ফোরামের ‘গ্লোবাল কমপেটিটিভনেস রিপোর্ট ২০১৮ বলছে, এবার ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ রয়েছে ১০৩তম অবস্থানে। আগের বছর ১৩৫ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০২তম অবস্থানে ছিল।

চলতি বছরের শুরুতে চালানো জরিপের ভিত্তিতে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বুধবার বিশ্বব্যাপী একযোগে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ঢাকার সিরডাপ মিলনায়তনে ফোরামের পক্ষে বাংলাদেশে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।

একটি দেশের অবস্থান বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, পণ্য বাজার, শ্রম বাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের আকার, বাজারের গতিশীলতা, নতুন ধারণার আত্মীকরণ- এই ১২টি মানদণ্ড ব্যবহার করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম।

এসব মানদণ্ডের ভিত্তিতে ১০০ ভিত্তিক সূচকে সব মিলিয়ে এবার বাংলাদেশের স্কোর হয়েছে ৫২.১, যার গতবছরের স্কোরের চেয়ে ০.৭ বেশি।

গতবছর এ সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানে সাত ধাপ, তার আগের বছর এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছিল। এবার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের এই সূচক তৈরির মেথডলজিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তুলনা করার সুবিধার জন্য এ প্রতিবেদনে গত বছরের সূচকের অবস্থানও নতুন মেথডলজিতে প্রকাশ করা হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছে, সূচকের মানদণ্ডগুলোর মধ্যে প্রতিষ্ঠান, অবকাঠামো, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, স্বাস্থ্য, দক্ষতা, শ্রম বাজার, বাজারের আকার, উদ্ভাবনী ক্ষমতায় বাংলাদেশের উন্নতি হলেও পণ্য বাজার, আর্থিক ব্যবস্থা, বাজারের গতিশীলতায় অবনতি হয়েছে।

বিশ্বে প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দিক দিয়ে এবারের সূচকের শীর্ষে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র, তাদের স্কোর ৮৫ দশমিক ৬। এরপরই রয়েছে সিঙ্গাপুর, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, জাপান, নেদারল্যান্ডস, হংকং, যুক্তরাজ্য ও সুইডেন ও ডেনমার্ক।

এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে ভারত। ৬২ স্কোর নিয়ে ভারত আছে সূচকের ৫৮ নম্বরে। গতবারের চেয়ে পাঁচ ধাপ উন্নতি হয়েছে দেশটির।

শ্রীলঙ্কা ৫৬ স্কোর নিয়ে সূচকের  ৮৫তম, ৫১ স্কোর নিয়ে পাকিস্তান সূচকের ১০৭ নম্বরে এবং নেপাল ৫০.৮ স্কোর নিয়ে ১০৯ নম্বর অবস্থানে রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম ২০০১ সাল থেকে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে আসছে। সিপিডি বাংলাদেশে বৈশ্বিক এই ফোরামের সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

ঢাকায় এ প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “সার্বিকভাবে এবার বাংলাদেশের পয়েন্ট কমেনি বরং শূন্য দশমিক ৭ পয়েন্ট বেড়েছে। কিন্তু এবারের গবেষণা পদ্ধতিতে একটা বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেসব বিষয়কে কেন্দ্র করে সূচক তৈরি হয়, সেখানে এবার আইসিটির ব্যবহারের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মূলত এ কারণেই বাংলাদেশে এবার সার্বিকভাবে সূচকে কিছুটা পিছিয়েছে।”

তিনি বলেন, আগামীতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এক ধরনের ‘ওপেন প্ল্যাটফর্মে’ পোঁছাতে যাচ্ছে। সে পর্যায়ে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে।

সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের জরিপের জন্য ১৪০টি দেশের ১৬ হাজার ৬৫৮ জন ব্যবসায়ী ও নির্বাহীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। বাংলাদেশের ৮৩টি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে এবারের জরিপের জন্য।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মে পর্য়ন্ত তিন মাস এই জরিপ চলে। তাতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের তথ্য নেওয়া হয়।

গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অবকাঠামো খাতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি দেখিয়েছে। এই মানদণ্ডে ২০১০ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল বিশ্বে ৯৬তম; এবার আছে ৮১ নম্বরে।

“তবে আমরা এবার সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছি সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায়। ৫৮তম অবস্থান থেকে আমরা বিশ্বে ৪১তম অবস্থানে উঠে এসেছি।

“তবে দক্ষতার সূচকে আমাদের অবস্থান আগের চেয়ে পিছিয়েছে। আর্থিক খাতে এক সময় আমাদের অবস্থান ছিল ৪৭তম। সেটা এখন পিছিয়ে ৭২তম অবস্থানে গেছে।”

তবে বাজারের আকারের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এবার ভালো করেছে বলে জানান সিপিডির গবেষণা পরিচালক।

তিনি বলেন, “৩৪তম অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছি ২৮তম অবস্থানে। দেশে যেহেতু প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, মানুষের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, ভোগজনিত ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটি বাজারের আকার বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে বলে আমরা মনে করি।”

মোয়াজ্জেম বলেন, বাংলাদেশের জন্য যেসব বিষয়কে সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করা হয় তার শীর্ষে আগে ছিল অবকাঠামোর দুর্বলতা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্নীতিই সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।

সিপিডির সম্মানীত ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এখন পণ্য উৎপাদন, সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়গুলো পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। এসব বিষয় প্রতিযোগিতার সক্ষমতা নির্ধারণ করে দিচ্ছে। ফলে বাংলাদেশকেও শ্রমঘন শিল্পের সঙ্গে আইসিটি, পুঁজি- সবকিছু সমন্বিতভাবে দেখতে হবে।

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। এছাড়া গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।