ফরহাদ খাঁ দম্পতি হত্যা: ২ আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন

সাংবাদিক ফরহাদ খাঁ ও তার স্ত্রীকে হত্যার মামলায় বিচারিক আদালতে প্রাণদণ্ড পাওয়া দুই আসামির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2018, 12:05 PM
Updated : 16 Oct 2018, 12:05 PM

আসামিরা হলেন- ফরহাদ খাঁর ভাগ্নে নাজিমুজ্জামান ইয়ন ও তার বন্ধু রাজু আহমেদ।

বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এস এম আবদুল মবিনের হাই কোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেয়।

গত ১১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আসামিদের করা আপিল ও তাদের ডেথ রেফারেন্সের ওপর (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য অবেদন) শুনানির পর মঙ্গলবার রায়ের জন্য রেখেছিল আদালত।  

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম আজাদ খান।

আসামি ইয়ন ও রাজুর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী, আব্দুল মতিন খসরু, আহছান উল্লাহ ও সুব্রত সাহা।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান রুবেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হত্যা সংগঠিত করার সময় আসামি ইয়ন ও তার বন্ধু রাজুর বয়স ছিল ২০-২১ বছর, অর্থাৎ তারা তখন কৈশোর উত্তীর্ণ যুবক।

“তাই অপরাধ প্রমাণ হওয়ার পরও আদালত তাদের বয়স ও সময় বিবেচনায় নিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন দিয়েছেন। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।”

তিনি আরো বলেন, “পুলিশ প্রধানের প্রতি একটি ইনকোয়্যারি দেওয়া হয়েছে রায়ে। সেটি হল- ফরহাদ খাঁর মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে শফিকুল ইসলাম সুজন (১৮) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব-৩। থানায় নেওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

“এই যুবক সম্পর্কে চার্জশিটে কিছুই উল্লেখ নেই। কেন তাকে ধরা হল বা কেন তাকে ছেড়ে দেওয়া হল বা তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা সে বিষয়টি পুলিশ প্রধানকে ইনকোয়্যারি করতে বলা হয়েছে।”

২০১১ সালের ২৮ জানুয়ারি নয়াপল্টনের ভাড়া বাসায় খুন হন ফরহাদ খাঁ ও তার স্ত্রী রহিমা খানম। পুলিশ বাসার শয়নকক্ষ থেকে ওই দম্পতির গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে।

তখন ফরহাদ খাঁ ছিলেন দৈনিক জনতার জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই দিনই তার ছোটোভাই আব্দুস সামাদ খাঁ অজ্ঞাতদের আসামি করে পল্টন থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

মামলার পরপরই পল্টন থানার এসআই জিল্লুর রহমান তদন্ত শুরু করেন। ঘটনাটি চাঞ্চল্যকর হওয়ায় পরবর্তীতে তদন্তের ভার দেওয়া হয় গোয়েন্দা পুলিশকে।

ঘটনার পরপরই আসামি ইয়নকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তির সূত্র ধরে রাজুকেও গ্রেপ্তার করা হয়। রাজু ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন।

আসামিদের জবানবন্দি পেয়ে সাংবাদিক ফরহাদ খাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, রক্তমাখা জামাকাপড় ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি চাকু উদ্ধার করে পুলিশ।

২০১২ সলের ২৮ ফেব্রুয়ারি আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত। অভিযোগপত্রে ৪৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। তাদের মধ্যে থেকে ৩৩ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত।

২০১২ সালের ১০ অক্টোবর ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল রায়ে ফরহাদ খাঁর ভাগনে নাজিমুজ্জামান ইয়ন ও তার বন্ধু রাজু আহমেদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

এই মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য হাই কোর্টে ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। একইসঙ্গে দুই আসামি আপিল করেন।

গত ৭ অগাস্ট আপিল ও ডেথ রেফান্সের শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে মামলার পেপারবুক থেকে এজাহার, অভিযোগপত্র, আসামি, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও নিম্ন আদালতের রায় উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।