দেবীর শক্তি রূপের আরাধনায় অসুর বধের প্রত্যয়

আত্মশক্তির উত্থান, প্রাণশক্তির জাগরণ, ষড়রিপুর গ্রাস থেকে মুক্তির আশায় সপ্তমী তিথিতে দেবী দুর্গার বন্দনা চলছে মণ্ডপে মণ্ডপে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Oct 2018, 09:07 AM
Updated : 16 Oct 2018, 09:07 AM

শাস্ত্র অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে দুর্গা দেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মধ্য দিয়ে সপ্তামাদি কল্পারম্ভ শুরু হয়।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই আচারের মধ্যে দিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা কৃষি, খনিজ, বনজ, জলজ, প্রাণিজ ও ভূমি সম্পদ রক্ষার জন্য দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন।

“সমাজের সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে বিশ্ব সংহতি সমুন্নত রাখার আহ্বান জানিয়েছি দেবীকে। চলমান প্রেক্ষাপটে জাতিগত বিরোধ নিষ্পত্তির প্রার্থনা করেছি।”

ওয়ারীর দক্ষিণ মৈশুণ্ডী মণ্ডপে নৈবদ্য দিতে আসা অনন্যা রায় বললেন, ‘মাতৃশক্তির’ প্রতীক দেবী দুর্গার কাছে নারীর নিরাপত্তা আর অগ্রযাত্রা চেয়ে প্রার্থনা করেছেন তিনি।

মেরুল বাড্ডার নিমতলি মন্দিরে দেবী বন্দনা করতে আসা সুবিমল দেব বলেন, “মায়ের চরণে আজ প্রার্থনা করেছি, এ দেশে যেন অসাম্প্রদায়িক পরিবেশে আমরা বাস করতে পারি।”

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেবী প্রতিমার চরণে পুষ্পাঞ্জলী দিয়ে সপ্তর্ষী রায় বলেন, “অসুর নিধনের প্রার্থনা করেছি। সে অসুর হোক পথেঘাটে কিংবা মনে। নিরাপদে থাকুক সকলে। মনের অন্ধকার দূর করে আলো জ্বলুক সবার হৃদয়ে।”  

ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত নারায়ণ চক্রবর্তী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সপ্তমী লগ্নে নবপত্রিকা প্রবেশ একটি ‘প্রতীকী’ পূজা।

‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। এ পূজায় কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান এই নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়।

পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। তার কপালে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম ‘কলাবউ’।

হিন্দু বিশ্বাসে নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদকে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীক বিবেচনা করা হয়। এই নয় দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’ নামে ‘নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমোঃ’ মন্ত্রে পূজিতা হন।

নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়।

দুর্গোৎসবের মহাসপ্তমীতে রাজধানীর ফার্মগেইট খামারবাড়ি মণ্ডপে পূজার উপাচার নিচ্ছেন পুণ্যার্থীরা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

সোমবার সন্ধ্যায় মহাষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় দেবী দুর্গার বোধন ও পরে সন্ধ্যায় মূল প্রতিমায় দেবী ও তার সন্তানদের প্রাণপ্রতিষ্ঠা ও চক্ষুদানের মাধ্যমে শুরু হয় দুর্গোৎসবের মূল আচার।

১৭ অক্টোবর অষ্টমী পূজার দিন হবে সন্ধিপূজা। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে হবে কুমারী পূজা। ১৯ অক্টোবর সকালে বিহিত পূজার মাধ্যমে হবে নবমী পূজা। ২০ অক্টোবর সকালে দর্পন বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

সেদিন বিকাল ৩টায় রাজধানীর ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে বের হবে ঢাকায় প্রতিমা বিসর্জনের মূল শোভাযাত্রা। নগরীর ওয়াইজঘাট, তুরাগ, ডেমরা, পোস্তগোলা ঘাটে হবে প্রতিমা বিসর্জন।

ঢাকা মহানগরীতে ২০ অক্টোবর রাত ১০টার মধ্যে নিরঞ্জন (প্রতিমা বিসর্জন) সমাপ্ত করার নির্দেশনা দিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ।

দুর্গোৎসব উপলক্ষে কক্সবাজারে কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হিন্দু রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য পূজার আয়োজন করেছে সরকার।

এছাড়া উৎসব উপলক্ষে মন্দিরে মন্দিরে আরতি ও সংগীত প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও বিশেষ প্রসাদ বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সারা দেশে ৩১ হাজার ২৭২টি মণ্ডপে দুর্গোৎসব চলছে, যা গতবারের তুলনায় ১১৯৫টি বেশি। এর মধ্যে রাজধানীতে রয়েছে ২৩৪টি মণ্ডপ।