এবার ৭০০ কোটি টাকার ভোট

একাদশ সংসদ নির্বাচনে পরিচালনা ও আইন শৃঙ্খলায় ৭০০ কোটি টাকার খাতওয়ারি বরাদ্দ অনুমোদন করেছে নির্বাচন কমিশন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2018, 07:39 PM
Updated : 15 Oct 2018, 07:42 PM

সোমবার কমিশন সভা শেষে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

৩০ অক্টোবর থেকে ২৮ জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ভোটের ক্ষণ গণনা শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহ আগে কাজে কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়।

সকালে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে এ সভা শুরু হয়। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সভা বর্জন করলেও নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও শাহাদাত হোসেন চৌধুরী অংশ নেন।

সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ ৫ দফা বিষয়ে এ কমিশন সভায় ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ইসি সচিব হেলালুদ্দীন বলেন, “আমরা কমিশন সভায় সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি তুলে ধরেছি। এর চুলচেরা বিশ্লেষণে করে দেখেছি-কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে; আর কী করতে হবে। ৩০ অক্টোবরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করা হবে।”

তিনি জানান, ৩০ অক্টোবর পর যে কোনো সময় তফসিল ঘোষণা করা হবে। এরপরেই প্রয়োজনীয় কিছু বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

“একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য ৭০০ কোটি টাকার খাতওয়াদি বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছে আজকের কমিশন সভা ৭০০।”

১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের এ নির্বাচনে পরিচালনা ও নিরাপত্তায় এ ব্যয় ধরা হয়েছে। নির্বাচনী ব্যয়ের দুই- তৃতীয়াংশই যায় নিরাপত্তা খাতে।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে মোট ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬৯ টাকা। এর মধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় ৮১ কোটি ৫৫ লাখ ৪১ হাজার ৩৪১ টাকা এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পেছনে ব্যয় হয় ১৮৩ কোটি ১২ লাখ ৮ হাজার ১২৮ টাকা।

গত নির্বাচনে ১৪৭ আসনে ভোট হয়, ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন একক প্রার্থীরা। অর্ধেক এলাকায় ভোট করতে হওয়ায় বরাদ্দের তুলনায় খরচ অনেক কমে আসে।

নবম সংসদ নির্বাচনে ১৬৫ কোটি ৫০ হাজার ৬৮৭ টাকা ব্যয় হয়; যাতে ভোটার ছিল ৮ কোটি ১০ লাখের বেশি।

উপকরণ ও ব্যবস্থাপনাসহ সব খাতে ব্যয় বাড়ার কারণে ধীরে ধীরে নির্বাচনী বরাদ্দও বাড়ে বলে জানান ইসি কর্মকর্তারা।

অষ্টম সংসদ নির্বাচনে মোট ব্যয় হয় ৭২ কোটি ৭১ লাখ ৩২ হাজার ২২০ টাকা; সপ্তম সংসদ নির্বাচনে পরিচালনা বাবদে ১১ কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার ৩৪৭ টাকা; ষষ্ঠ জাতীয় নির্বাচনে মোট ৩৭ কোটি ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৩০ টাকা ব্যয় হয়।

পঞ্চম সংসদে নির্বাচন পরিচালনা ও আইন শৃঙ্খলাখাতে ব্যয় হয় ২৪ কোটি ৩৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৭ টাকা। চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৫ কোটি ১৫ লাখ টাকায় দাঁড়ায়। তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ছিল ৫ কোটি ১৬ লাখ  টাকা।

দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনায় ব্যয় হয় ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা।

১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচনে ৩ কোটি ৫২ লাখ ৫ হাজার ৬৪২ জন ভোটারের বিপরীতে নির্বাচনী ব্যয় ছিল ৮১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

১০টি আইন শৃঙ্খলা সভা

সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয়ভাবে আইন শৃঙ্খলা সভা করবে ইসি। সেই সঙ্গে দেশের ৮ বিভাগে ও পার্বত্য জেলায় একটি রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ প্রশাসন, পুলিশ, সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সভা করা হবে।

সব মিলিয়ে ১০টি সভায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা সবখানে সফর করবেন। নির্বাচনী কাজ তদারকির জন্যেও চার নির্বাচন কমিশনার কাজ ভাগ করে নেবেন।

ইভিএম ও অনলাইন মনোনয়নের প্রস্তুতি থাকছে

ইসি সচিব জানান, সংসদ নির্বাচনে এবারই প্রথমবারের মতো অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। নির্বাচনে কিছু কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং (ইভিএম) মেশিন ব্যবহারের প্রস্ততিও থাকবে।

“এক্ষেত্রে সরকারেরর কাছে আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আইন সংশোধন হলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। না হলে আগের পদ্ধতে (ব্যালট পেপার) প্রস্তুত থাকবে।”

সচিব জানান, ২৭ অক্টোবর দেশের নয়টি স্থানে এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে দু'দিনব্যাপী ইভিএম মেলার আয়োজন করা হবে।

তিনি বলেন, নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অনলাইন এবং নিজস্ব সিস্টেমের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব ফল কেন্দ্রীয়ভাবে কমিশন থেকে প্রচার করা হবে।

ইউএনও শূন্যপদ পূরণের নির্দেশ

সচিব জানান, নির্বাচনে প্রচুর লোকবলের প্রয়োজন হয়। এজন্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে লোকবল সংগ্রহ করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের শূন্যপদ পূরণেও সরকারের কাছে ইসির নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

সংসদ নির্বাচনে  জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকেন।

ভোটকে সামনে রেখে প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসারদের প্যানেল প্রস্তুতের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে জানান সচিব হেলালুদ্দীন।

আরও খবর-