‘শ্রমিক’ থেকে ‘গণমাধ্যমকর্মী’ হচ্ছেন সাংবাদিকরা

সব ধরনের গণমাধ্যমকর্মীর জন্য চাকরির শর্ত ঠিক করে একটি আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে সরকার; যেখানে সাংবাদিকদের আগের মত ‘শ্রমিক’ হিসেবে বর্ণনা না করে ‘গণমাধ্যমকর্মী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Oct 2018, 10:45 AM
Updated : 15 Oct 2018, 12:30 PM

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গণমাধ্যম কর্মী (চাকরির শর্তাবলী) আইন ২০১৮’ এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।

পরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আগে গণমাধ্যম কর্মীরা চলতেন ‘দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইন- ১৯৭৪’ এর আওতায়। এর সঙ্গে শ্রম আইনের কিছু বিষয় সাংঘর্ষিক হচ্ছিল।

“পরে সাংবাদিকদেরকে শ্রম আইনের আওতায় নিয়ে যাওয়া হয় এবং ডেফিনেশনের মধ্যে তাদের শ্রমিক হিসেবে ডিফাইন করা হয়। নতুন আইনের খসড়ায় ওখান থেকে বেরিয়ে এসেছে।”

শফিউল বলেন, “শ্রম আইনের অধীনে গণমাধ্যম কর্মীদেরও ‘শ্রমিক’ হিসেবে বিবেচনা করা হত। নতুন আইন পাস হলে গণমাধ্যম কর্মীরা আর শ্রমিক থাকবেন না, তাদের গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে অভিহিত করা হবে।”

দ্য নিউজপেপার এমপ্লয়িজ (চাকরির শর্তাবলী) আইনে সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রেস কর্মচারীদের চাকরির শর্ত, আর্থিক বিষয় ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নির্ধারণ করা ছিল।

সরকার ওই আইনকে রহিত করে সব শ্রমিকের জন্য ২০০৬ সালে ‘শ্রম আইন’ প্রণয়ন করে, যাতে সংবাদপত্রের সাংবাদিক, প্রেস শ্রমিক ও প্রেস কর্মচারীদের বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শফিউল বলেন, নতুন আইনের খসড়ায় গণমাধ্যম কর্মীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- গণমাধ্যমে কর্মরত পূর্ণকালীন সাংবাদিক, কলাকৌশলী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, কর্মচারী বা নিবন্ধিত সংবাদপত্রের মালিকাধীন ছাপাখানা এবং বিভিন্ন বিভাগে নিয়োজিত কর্মী।

সম্প্রচার কাজে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত গণমাধ্যমের কর্মীরা সম্প্রচার কর্মী এবং প্রযোজক, পাণ্ডুলিপি লেখক, শিল্পী, ডিজাইনার, কার্টুনিস্ট, ক্যামেরাম্যান, অডিও ও ভিডিও এডিটর, চিত্র সম্পাদক, শব্দ ধারণকারী, ক্যামেরা সহকারী, গ্রাফিক্স ডিজাইনারসহ যে পেশাজীবীরা এ কাজের সঙ্গে জড়িত, প্রস্তাবিত আইনে তাদের ‘কলাকুশলী’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।

গণমাধ্যম কর্মীদের সপ্তাহে কর্মঘণ্টা ৪৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৩৬ ঘণ্টা করার প্রস্তাব করা হয়েছে জানিয়ে শফিউল বলেন, এর চেয়ে বেশি কাজ করালে ওভারটাইম দিতে হবে।

“আগের ১০ দিনের নৈমত্তিক ছুটি (সিএল) ১৫ দিন করা হয়েছে। অর্জিত ছুটি ৬০ দিনের বদলে ১০০ দিন করা হচ্ছে, ১১ দিনে একদিন করে ছুটি জমা হবে।”

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রত্যেক গণমাধ্যমকর্মী চাকরির ১৮ ভাগের একভাগ সময় পূর্ণ বেতনে অসুস্থতাজনিত ছুটি পাবেন; সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের প্রত্যয়নপত্র থাকতে হবে।

“এককালীন বা একাধিকবার সর্বোচ্চ ১০ দিন উৎসব ছুটি পাবেন। নারী কর্মীরা সরকারি বিধি অনুযায়ী, অর্থাৎ ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবেন। আগে আট সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পেতেন নারী গণমাধ্যমকর্মীরা।”

গণমাধ্যম কর্মীদের তিন বছর পর পর পূর্ণ বেতনে শ্রান্তি বিনোদন ছুটি এবং বিধিমালা অনুযায়ী স্বাস্থ্য বীমা সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।  

নতুন আইন হলে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন করতে হবে জানিয়ে শফিউল বলেন, নিয়োগের এক বছর পর থেকে ভবিষ্য তহবিলে মাসিক চাঁদা জমা দেওয়া যাবে। আগে দুই বছর চাকরি পার হলে ভবিষ্য তহবিলে চাঁদা জমা দেওয়া যেত।

“সর্বনিম্ন ৮ ও সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ এই তহবিলে জমা রাখা যাবে। আগে ৭ শতাংশ জমা রাখা যেত। মালিককে সমান হারে প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা রাখতে হবে।”

গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রচলতি আইন অনুসরণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করে অভিযোগ নিরসন পদ্ধতি প্রবর্তন করার কথা বলা হচ্ছে খসড়ায়।

নতুন আইনে বলা হয়েছে, গণমাধ্যমকর্মীদের বেতন কাঠামো পর্যালোচনার জন্য সরকার প্রজ্ঞাপন দিয়ে ওয়েজবোর্ড গঠন করবে।

ওয়েজবোর্ডের সিদ্ধান্ত সকল গণমাধ্যম মালিককে পালন করতে হবে জানিয়ে শফিউল বলেন, যদি কোনো গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে কোনো গণমাধ্যম কর্মীর বকেয়া থা,কে তবে তিনি বা তার লিখিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি, মৃত গণমাধ্যম কর্মীর ক্ষেত্রে তার পরিবারের কোনো সদস্য বকেয়া পাওনা আদায়ে যথপোযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন।

“এই আইনের বিধি লংঘন করলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে, এজন্য সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা যাবে। জরিমানা আদায় না হলে আদালত জেল দিতে পারবে।

“সরকার এই আইন লংঘনকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়াসহ যে কোনো পর্যায়ে সরকার প্রদত্ত যে কোনো সুযোগ-সুবিধা স্থগিত বা বন্ধ করে দিতে পারবে।”

এ আইন পাস হলে পরিদর্শন কমিটি করা হবে জানিয়ে শফিউল বলেন, পরিদর্শন কমিটির সদস্যরা পরিদর্শক হিসেবে গণ্য হবেন।

পরিদর্শন কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব চাকরিবিধি থাকবে। কোনো বিষয়ে বিরোধ দেখা দিলে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।

প্রস্তাবিত আইনে গণমাধ্যম কর্মীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি, এটি বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে বলে জানান শফিউল।