রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রোববার শুনানি করার পর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
গত বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আবেদনের পক্ষে শুনানি শেষ করলে আদালত রোববার অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানির দিন রেখেছিল।
সে অনুযায়ী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম রোববার দুপুরের বিরতির পর শুনানি করেন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশিরুল্লাহ।
খালেদা জিয়ার পক্ষে এ জে মোহাম্মদ আলী ছাড়াও মওদুদ আহমেদ, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল, এ কে এম এহসানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
আদেশের পর আইনজীবী এহসানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা যখন ২ অক্টোবর আপিলটা দায়ের করি সেই মুহূর্তে আমাদের হাতে কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামিন না মঞ্জুরের সার্টিফায়েড কপি (সত্যায়িত অনুলিপিটি) ছিল না।
“না থাকার কারণ হচ্ছে, জেলা আদালত থেকেই আমাদের দেওয়া হচ্ছিল না। অর্থাৎ জজসাহেব আদেশটিতে স্বাক্ষর করেননি। পরে সার্টিফায়েড কপিটি পাওয়ামাত্র জামিন ‘না মঞ্জুর’ আদেশের কপিটি সম্পূরক হিসেবে সংযুক্ত করে দিই।
“আজকে অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে বললেন যে, আপিলের সঙ্গে জামিন ‘না মঞ্জুরের’ কপিট সংযুক্ত থাকতে হবে। এরপর বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি সেটা যুক্ত করে আমাদের নতুন করে আপিল করতে বলেন।”
নতুন করে আপিল করলেও আগের ওকালতনামাই বহাল থাকবে বলে জানান এই আইনজীবী।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশিরুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিলের বিধান হচ্ছে, এর সাথে ‘না মঞ্জুরের’ আদেশটি সংযুক্ত থাকতে হবে। আটর্নি জেনারেল শুনানির শুরুতেই এটা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আদালত নতুন করে আপিল করে জামিন চাইতে বলেছে।”
নতুন করে জামিন আবেদন করলে আবার এর ওপর শুনানি করতে হবে বলে মনে করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশিরুল্লাহ।
বিএনপির টানা অবরোধ-হরতালের মধ্যে ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগমোহনপুর এলাকায় একটি নৈশকোচে পেট্রোল বোমা হামলায় আট যাত্রীর মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে হত্যা ও বিস্ফোরক মামলা করে পুলিশ।
পরে পুলিশের আবেদনে বিস্ফোরক আইনের মামলাটি বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় রূপান্তর করা হয়।
এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ওই মামলায় তিনি জামিন পেলেও আরও কয়েকটি মামলার কারণে তার মুক্তি হচ্ছে না।
এ কারণে বিশেষ ক্ষমতা আইনের এ মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে জামিনের আবেদন করা হয়েছিল কুমিল্লার বিশেষ আদালতে।
গত ১ জুলাই কুমিল্লার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক কে এম শামছুল আলম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার দেখালেও জামিনের বিষয়ে কোনো আদেশ না দিয়ে আবেদনটি ৮ অগাস্ট শুনানির জন্য রেখে দেন।
এরপর গত ১১ জুলাই হাই কোর্টে ফৌজদারি আপিলের পাশাপাশি হাই কোর্টে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। হাই কোর্ট কুমিল্লার আদালতের জামিন আবেদনটি ২৬ জুলাইয়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেয়।
গত ২৫ জুলাই কুমিল্লার আদালত খালেদার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করলে ২৯ জুলাই ফের হাই কোর্টে তার জামিন আবেদন করা হয়। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে ৬ অগাস্ট খালেদা জিয়াকে ছয় মাসের জামিন দেয় বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস এম মজিবুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
রাষ্ট্রপক্ষ ওই জামিন আদেশ স্থগিত চেয়ে চেম্বার আদালতে গেলে চেম্বার বিচারপতি কোনো আদেশ না দিয়ে বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ আগস্ট আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে নো অর্ডার দিলেও জামিন প্রশ্নে হাই কোর্টের দেওয়া রুল চার সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে বলে।
পরে হাই কোর্ট রুল নিষ্পত্তি করে বিচারিক আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি সাত দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
কুমিল্লার বিচারিক হাকিম মোহাম্মদ গোলাম মাহাবুব খান গত ১৩ সেপ্টেম্বর জামিন নাকচ করলে ২ অক্টোবর খালেদার আইনজীবীরা হাই কোর্টে আবেদন করেন।