নিরাপত্তা এখন ‘বাড়াবাড়ির’ পর্যায়ে: মেয়র খোকন

ঢাকায় বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার যে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তা ‘বাড়াবাড়ির’ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকছে বলে মনে করেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2018, 12:41 PM
Updated : 14 Oct 2018, 12:43 PM

ঝুঁকি না থাকলে নিরাপত্তার ঘেরাটোপ সৃষ্টি করে আতঙ্ক তৈরি না করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রোববার নগর ভবনে হিন্দু ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র।

তিনি বলেন, “এই সময় এত বেশি উদ্বেগ, এত বেশি সতর্কতার কিছু নাই। বাংলাদেশে তো যুদ্ধ পরিস্থিতি নাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে স্থিতিশীল আছে। এটা বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় নয় যে পাঁচশোটি এলাকায় একসঙ্গে বোমাবাজি হয়ে গেল। এটা শেখ হাসিনার সরকার।”

নিজের ছেলেবেলায় ঢাকার ঈদগায় চার-পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কখনও না দেখার কথা বলেন ঢাকার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন।

তিনি বলেন, “এখন এটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে।

“কোনোদিন আমরা দেখিনি ঈদগায় চার স্তরের-পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ছাতা নিয়ে আসবেন না, অমুকটা নিয়ে আসবেন না। আমাদের ছোটবেলায় শাঁখারিবাজার-তাঁতীবাজার এলাকায় পূজামণ্ডপ ঘুরেছি। কখনও পুলিশ দেখিনি। যে যার মতো উৎসব করতো। আজকে মন্দিরে মন্দিরে পুলিশের পাহারা বসাতে হয়। বৌদ্ধ ধর্মের প্রবারণা পূর্ণিমা কয়দিন পরেই, সেখানেও আপনি দেখবেন নিরাপত্তার একটা চাদর।”

বেশ কয়েক বছর আগে জঙ্গি হামলার পর বিভিন্ন উৎসবে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। ২০১৬ সালে গুলশান হামলা এবং শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে হামলার চেষ্টার পর তা আরও জোরদার করা হয়।

নিরাপত্তার ঘেরাটোপ উৎসবের আমেজকে নষ্ট করে বলে মনে করেন সাঈদ খোকন।

তার মতে, গত কয়েক বছরে এ ধরনের ঘটনা না ঘটলেও নিরাপত্তার কড়াকড়ি সবাইকে একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপে ফেলেছে।

“আমাদের জীবন এমন কেন থাকবে? পুলিশে ঘেরা, নিরাপত্তায় ঘেরা। এখানে বোম মারতে পারে। কই আমরা তো এমন কিছু দেখিনি। বিগত কয়েক বছরে এমন কিছু দেখিনি। এই যে একটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ আমাদের মাঝে।”

নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকলেও তা দিয়ে আতঙ্ক না তৈরির আহ্বান জানান মেয়র সাঈদ খোকন।

“থ্রেট থাকতে পারে, ঝুঁকি থাকতে পারে। সেটা প্রকাশ্যে এমনভাবে আতঙ্ক সৃষ্টি করার কোনো কারণ আছে বলে একজন মেয়র হিসেবে আমি তা মনে করি না। আমার নাগরিক হাসিমুখে ঘুরবে। আমরা যেখানেই থাকি না কেন ভয়ভীতি যেন ছড়িয়ে না পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা এমন কোনো মন্তব্য না করি যেন মানুষের মধ্যে ভীতির সঞ্চার হয়।”

মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, বাংলাদেশের মানুষের পারস্পরিক সম্প্রীতির ইতিহাস আছে। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল বিভেদ তৈরির চেষ্টা করে। এদের কারণেই সমস্যা তৈরি হচ্ছে।

সভায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, সচিব শাহাবুদ্দিন খান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শেখ মো. সালাহ উদ্দিন, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. জাহিদ হোসেনসহ ঢাকার বিভিন্ন পূজা উদযাপন কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

হিন্দু ধর্মীয় নেতারা পূজার সময় বিভিন্ন মন্দির এবং পূজামণ্ডপের আশপাশের সড়ক পরিচ্ছন্ন রাখা, সড়কে পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিত করতে মেয়রের প্রতি অনুরোধ জানান। মেয়র এসব বিষয় নিশ্চিত করা হবে বলে তাদের জানান।

পরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ১৫২টি পূজামণ্ডপের জন্য আর্থিক অনুদানের চেক তুলে দেন মেয়র খোকন।