খালেদার অনুপস্থিতিতে বিচার চালাতে ‘বাধা নেই’

কারাবন্দি খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চালানোর সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে তার করা আবেদন হাই কোর্টে খারিজ হয়ে গেছে। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Oct 2018, 05:52 AM
Updated : 14 Oct 2018, 06:57 AM

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার খালেদার রিভিশন আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দেয়।

হাই কোর্টের এই আদেশের ফলে বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে এ মামলার বিচার শেষ করতে কোনো আইনি বাধা থাকল না বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

পরে খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান গত ২০ সেপ্টেম্বর এক আদেশে বলেন, খালেদা জিয়া যেহেতু ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ আদালতে হাজির হচ্ছেন না, সেহেতু তার অনুপস্থিতিতেই এ মামলার বিচার কাজ চলবে। ওই আদেশের বিরুদ্ধেই হাই কোর্টে রিভিশন আবেদনটি করেছিলেন খালেদা জিয়া।

“গত ১০ অক্টোবর আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। আদালত আজ আদেশে আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন তার মানে হল, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে।”

খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম আদালত বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে দেখবে। তারপরও আদালত আমাদের আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের আদেশ আমরা আশা করিনি। 
 
“আমাদের আশা ছিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্বাধীনভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করবেন। বিশেষ করে বেগম জিয়ার মামলাটি নিয়ে তারা গভীরভাবে চিন্তা করবেন। আমরা সেটাও পেলাম না। এখন আমাদের সামনে একটা পথ আছে। সেটা হল আপিল বিভাগ। যেহেতু বিধান রয়েছে হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার, আমরা সেটি করব। আশা করব সেখানে ন্যায়বিচার পাব।’    

এতিমখানা দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।

‘অসুস্থতার কারণে’ তাকে সাত মাসে একবারও আদালতে হাজির করতে না পারায় জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ করতে সরকারের নির্দেশে আদালত স্থানান্তর করা হয় ওই কারাগারের ভেতরে।

গত ৫ সেপ্টেম্বর সেখানে বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে হাজির হয়ে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে খালেদা জিয়া বিচারককে বলেছিলেন, তিনি বার বার আদালতে আসতে পারবেন না, বিচারক তাকে ‘যতদিন খুশি’ সাজা দিতে পারেন। 

এরপর শুনানির দুটি তারিখে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে আদালত কক্ষে আনতে ব্যর্থ হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারা অনুযায়ী তার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চালানোর আর্জি জানান দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মো. আখতারুজ্জামান ১০ অক্টোবর তার আদেশে বলেন, “এক বছর ৯ মাস মামলাটি যুক্তিতর্কের পর্যায়ে থাকায় এবং আসামি বেগম খালো জিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে আদালতে হাজির না হওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারায় প্রসিকিউশনের দরখাস্তটি ন্যায়বিচারের স্বার্থে গ্রহণ করা যায়।”

এ মামলায় খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত হাজিরা অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য মওকুফ করে তার অনুপস্থিতিতে মামলার কার্যক্রম যথারীতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে বিচারক বলেন, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা চাইলে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে পারবেন।

ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে খালেদার পক্ষে তার আইনজীবীরা গত ২৭ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টে রিভিশন আবেদন করেন।

জজ আদালতের ওই আদেশ কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে রুল চাওয়ার পাশাপাশি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম স্থগিত চওয়া হয় সেই আবেদনে।

খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, খালেদা জিয়া অসুস্থতার কারণে আদালতে হাজির হননি। সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে তার সুস্থতা সবার আগে দেখা উচিত। আর তিনি যেহেতু কারাবন্দি, সেহেতু তার অনুপস্থিতিতে এ মামলার বিচার চালানো যায় না।

কিন্তু হাই কোর্ট শুনানি করে খালেদার আবেদন সরাসরি খারিজ করে দেওয়ায় জজ আদালতের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

পুরনো খবর