দুর্গা পূজায় নিরাপত্তা নিয়ে হিন্দু নেতাদের উদ্বেগ

দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিমা ও মন্দির ভাঙচুরের ঘটনার মধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্বাসের পরেও দুর্গা পূজার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2018, 02:45 PM
Updated : 13 Oct 2018, 02:45 PM

এবার শারদীয় দুর্গোৎসবের আগে শনিবার সকালে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্বেগের কথা তুলে ধরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি।

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল বলেন, “দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আগেও বলেছি, আজও বলছি, শুধু নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করেই পূজা ও ধর্মীয় উৎসব নিরাপদ করা যাবে না। সমাজ ও রাজনীতি থেকে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মান্ধতা নির্মূল করতে হবে। তবেই আসবে নিরাপত্তা।”

শেরপুর, বগুড়া, নীলফামারী, খুলনা, হবিগঞ্জ, পিরোজপুর, কুড়িগ্রাম, শরীয়তপুর, দিনাজপুর, রংপুর, গাজীপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে মন্দির ও প্রতিমা ভাংচুরের খতিয়ান তুলে ধরেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি।

এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা উদযাপন পরিষদের বর্ধিত সভায় পুলিশ মহাপরিদর্শক ও ডিএমপি কমিশনার এসে নিরাপত্তা ইস্যুতে পূজা উদযাপন পরিষদকে আশ্বস্ত করেছেন।

নির্মল বলেন, “অতীতের একাধিক জাতীয় নির্বাচন এ সম্প্রদায়ের জন্য সুখকর ছিল না। প্রশাসন  থেকে পূজোকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমাদের জন্য করণীয় সম্পর্কে যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, তা ইতোমধ্যে জেলা ও মহানগর কমিটি পর্যায়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নিরাপত্তা বিষয়ে সমন্বয় করার জন্য পূজা উদযাপন পরিষদের কার্যালয়ে মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।”

পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা গত ১০ বছর ধরে দুর্গোৎসবে তিন দিনের সরকারি ছুটির দাবি জানিয়ে আসলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন কোনো আশ্বাস আসেনি, তখন তা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় দুর্গোৎসব কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের।

তবে নির্মল চ্যাটার্জির আশা, ১৭ অক্টোবর মহাঅষ্টমীতে ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করবেন।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ আসে, ১৭ অক্টোবর, মহাঅষ্টমী তিথিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে।

পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা আশা করছেন, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এদিন সব নিয়োগপরীক্ষা স্থগিত রাখবেন।

ঈদ উৎসবের মতো দুর্গোৎসবে প্রধান প্রধান সরকারি ভবনে আলোকসজ্জা, রাজধানীর সড়কগুলো জাতীয় পতাকা ও শুভেচ্ছা বাণী সম্বলিত পতাকা দিয়ে সুসজ্জিত করা, হাসপাতাল-কারাগার-অনাথ আশ্রমে উন্নত মানের খাবার পরিবেশনের দাবি জানান তারা।

একইসঙ্গে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পরিবর্তে হিন্দু ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের ১৪ বিঘা বেহাত জমি পুনরুদ্ধার,  দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণ আইন প্রণয়নের দাবিও জানান পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারা।

এবার সারা বাংলাদশে ৩১ হাজার ২৭২টি মন্ডপে দুর্গা পূজা হবে। গত বছরের তুলনায় ১১৯৫টি পূজা বেড়েছে এবার।

ঢাকায় ৬ হাজার ৮০৪টি, চট্টগ্রামে ৪ হাজার ৫০৬টি, সিলেটে ২ হাজার ৩৪১ টি, খুলনায় ৪ হাজার ৮৮৩টি , রাজশাহীতে ৩ হাজার ৫৪২টি , রংপুরে ৫ হাজার ৩৭১টি , বরিশালে ১ হাজার ৭২৪টি, ময়মনসিংহে ২ হাজার ১০১টি মণ্ডপে পূজা হবে।

ঢাকায় পূজা হবে ২৩৪টি মণ্ডপে।

কক্সবাজারের কুতুপালংয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পেও হবে পূজা উদযাপন। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের হিন্দু নাগরিকদের জন্য সরকারিভাবে এই দুর্গোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। পূজা উদযাপন পরিষদ সেখানে নতুন বস্ত্র বিতরণও করেছে।

আগামী ১৪ অক্টোবর দুর্গার বোধন এবং পরদিন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মাধ্যমে শুরু হবে মূল পূজা। আর ১৯ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বির্সজনের মধ্যে দিয়ে দুর্গোৎসব শেষ হবে।

হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, এবার দেবী দুর্গা আসছেন ঘোটকে (ঘোড়ায়) চড়ে, যাবেন দোলায় (পালকি) চেপে।

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুরোহিত রঞ্জিত চক্রবর্তী বলেন, “শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী ঘোড়ায় চড়ে এলে তার ফল হয় ‘ছত্রভঙ্গসরঙ্গম’, অর্থাৎ সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে অস্থিরতার প্রকাশ পাবে। রাজনৈতিক উত্থান, পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, দুর্ঘটনা ও অপমৃত্যুর প্রভাব বাড়বে।

“আর দেবী দোলায় চেপে বিদায় নিলে ফল হয় ‘দোলায়াং মরকং ভবেৎ’। অর্থাৎ, দেখা দেবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়।”

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি জানিয়েছে, এবারও নগরীর ওয়াইজঘাট, তুরাগ, পোস্তগলা, ডেমরা, শ্যামবাজার ঘাটে হবে প্রতিমা বিসর্জন।

১৯ অক্টোবর বিকাল সাড়ে ৩টায় ঢাকেশ্বরী মন্দির থেকে  নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিমাগুলো নিয়ে হবে শোভাযাত্রা। নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে প্রধান র‌্যালিটি যাবে নগরীর ওয়াইজঘাটে।

রাত ১০টার মধ্যে সবগুলো ঘাটে প্রতিমা বিসজর্ন সম্পন্ন করার নির্দেশনা দিয়েছে পূজা কমিটি।