মোবাইলে প্রশ্ন: তদন্তে ঢাবির কমিটি, অস্বীকার সেই কোচিংয়ের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে প্রশ্ন আসার পর ‘প্রশ্নফাঁসের’ অভিযোগ ওঠায় ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2018, 12:42 PM
Updated : 13 Oct 2018, 05:08 PM

শুক্রবার রাতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “বোঝা গেল যে একটা অশুভ চক্র আছে। আমরা তো ডিজিটাল জালিয়াত চক্রকে ধরে ফেলেছি৷

“তবে একটা চক্র এখন সক্রিয় আছে। যেহেতু পরীক্ষার পরে একটা অভিযোগ উঠল, তাই সেটা কতোটুকু গ্রহণযোগ্য সেগুলো ইয়ে করে একটা প্রতিবেদন দেওয়া কখন- কিভাবে এটা আসলো।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদের নেতৃত্বধীন তদন্ত কমিটির দুই সদস্য হলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন ইমদাদুল হক ও সহকারী প্রক্টর মাকসুদুর রহমান। কমিটিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান মুহাম্মদ সামাদ বলেন, “শুক্রবার রাতেই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজকে ছুটির দিন ছিল, তবুও আমরা একটি মিটিং করেছি আজকে। গাইডলাইন ঠিক করেছি। আরো একটা মিটিং করব আগামীকাল।”

এদিকে বগুড়ার যে কোচিং সেন্টার থেকে পাওয়া হাতে লেখা উত্তরসহ প্রশ্ন শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে আসে, সেই এক্সক্লুসিভ প্রাইভেট প্রোগ্রাম (ইপিপি) এর পরিচালক ‘প্রশ্নফাঁসের’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও ক্যাম্পাসের বাইরে ৮১টি কেন্দ্রে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শুরুর ৩১ মিনিট পরই হাতে লেখা প্রশ্নপত্রের ১৪টি ছবি সাংবাদিকদের হাতে আসে।

পরে যাচাই করে দেখা যায়, এ প্রশ্নপত্র পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৪৩ মিনিট আগে (সকাল ৯টা ১৭ মিনিটে) এক শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোনে আসে।

নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র সেসময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পরীক্ষার আগের রাতে গ্রাম থেকে এক পরীক্ষার্থী আসে তার কাছে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ওই পরীক্ষার্থীর মোবাইল ফোনের হোয়াটসঅ্যাপে এক সেট প্রশ্নপত্র আসে। তবে কিছু সময় পর জানা যায় সেটি ভুল।

“কিছুক্ষণ পরে সকাল ৯টা ১৭ মিনিটের দিকে ফের এক সেট হাতে লেখা উত্তরসহ প্রশ্ন হোয়াটসঅ্যাপে আসে। প্রশ্নগুলো অভিভাবকের মাধ্যমে ওই পরীক্ষার্থীর মোবাইলে আসে। পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে জানতে পারি, প্রশ্নগুলো বগুড়ার এক প্রাইভেট কোচিং (ইপিপি) থেকে তার বাবা পেয়ে তাকে পাঠিয়েছেন। তারপর সেটা এক সাংবাদিককে জানাই। পরে পরীক্ষার মূল প্রশ্নের সঙ্গে সেটার মিল পাওয়া যায়।”

পরে দেখা গেছে, মূল প্রশ্নপ্রত্র ও মোবাইল ফোনে আসা প্রশ্নের ৭২টি হুবহু একই। ১০০টি প্রশ্নের মধ্যে বাংলা অংশে ১৯টি, ইংরেজি অংশে ১৭টি, সাধারণ জ্ঞান অংশে ৩৬টি (বাংলাদেশ বিষয়াবলি ১৬ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ২০) প্রশ্নে হুবহু মিল রয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পরে সাংবাদিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সোহেল রানাকে জানান।

বগুড়ার সেই এক্সক্লুসিভ প্রাইভেট প্রোগ্রাম (ইপিপি) নামের কোচিং সেন্টার থেকে উত্তরসহ প্রশ্নপত্রটি আসার অভিযোগকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলছেন এর পরিচালক সোহেল আহমেদ।

তিনি বলেন, “আমাদের কোচিংয়ের কেউ প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত নয়। এটা পরিকল্পিতভাবে কোচিংয়ের সুনাম নষ্ট করার জন্য অন্য কেউ করে থাকতে পারে।

“তারপরও আমরা তদন্ত করে দেখছি কোচিংয়ের কেউ যদি এটার সঙ্গে জড়িত থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।”