নগরে শরৎ উৎসবে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধরে রাখার শপথ

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রজন্মান্তরে বয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ ধ্বনিত হল নাগরিক শরৎ উৎসবে।

জয়ন্ত সাহা নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2018, 06:23 AM
Updated : 13 Oct 2018, 06:23 AM

শনিবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর আয়োজন করে শরৎ উৎসব। 

এ উৎসবে এসে অতিথিরা বলেন, শুধু আনন্দ-উৎসবে নয়, শরতসহ সব ঋতুবৈচিত্র্যের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগী হতে হবে। বাঙালির মানস কাঠামোতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান উৎসবের উদ্বোধন করতে এসে বলেন, “বর্ষা শেষে অপেক্ষা, কখন আসবে একটি সুন্দর সময়! এখন আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা কালো মেঘ, কখনও আবার আবছায়া। প্রকৃতির এমন খেলায় শরতের আনন্দোৎসব এসে জানিয়ে গেল, আমাদের সামনের দিনগুলো  আলোকময়।” 

বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য  বাঙালির মনে ‘অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্ম দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

তিনি বলেন, “আমরা যে বলি, আবহমান বাংলার সংস্কৃতিক ঐতিহ্য; সেটির মধ্যে শরৎ একটি শক্তিশালী অনুষঙ্গ। মানুষের হৃদয়ের যে প্রশস্ততা শরৎ সেখানে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে। মানস কাঠামোতে, জীবন আচারে বাঙালি অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আসে শরতের দুর্গোৎসব। শরৎ সেখানে অনেক গ্রহণীয়।”

এসময় তিনি ঋতু বৈচিত্র্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে প্রজন্মান্তরে চলমান রাখতে শপথ নেন। 

এসময় শরৎ উৎসবের তাৎপর্য নিয়ে কথা বলেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর নিগার চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী ‍সুইট।

এর আগে শিল্পী নুরুল হকের সন্তুরে রাগ পরিবেশনায় শুরু হয় সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শরৎ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। 

পরে একক সংগীত পর্বে মহাদেব ঘোষ গেয়ে শোনান রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘অমল ধবল পালে’।  পরে শিল্পী অনিমা রায় শোনান রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘ আমার রাত পোহালো ও দেখো দেখো সুখতারা’, সুমনা মজুমদার শোনান নজরুলসঙ্গীত ‘ভোরের ঝিলের জলে শালুক পদ্ম তোলে’, সঞ্জয় কবিরাজ শোনান নজরুলসঙ্গীত ‘শিউলি ফুল দোলে’, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস শোনান ‘ও আকাশ বল আমারে’।

একক আবৃত্তি পর্বে নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী শোনান কাজী নজরুল ইসলামের ‘বাংলাদেশ নম নম নম’।

দলীয় নৃত্য পর্বে সালমা মুন্নির পরিচালনায় দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাক্ষ, অনিক বসুর পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন, নাঈম হাসান সুজার পরিচালনায় নৃত্যজন, ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় বাফা দলীয় নৃত্য পরিবেশনা করে।

দলীয় সঙ্গীত পর্বে রবীন্দ্রসংগীত ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী শোনায় নজরুলসঙ্গীত ‘আজি শারদ প্রাতে’, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী শোনায় ‘আজও আছে একতারা আর নকশি কাঁথার মাঠ’, বহ্নিশিখা শোনায় ‘বিশ্ব সাথে জেগে যেথায় বিহারো’।

পশ্চিমবঙ্গের হালিশহর থেকে আগত ‘ছন্দে ছন্দে’ নৃত্য দলের বিশেষ পরিবেশনাও ছিল এই শরৎ উৎসবে

এদিন বিকালের পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, গীত শতদল, সমন্বয়, পঞ্চভাস্বর, উজান।  দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে কণ্ঠশীলন, ঢাকা স্বরকল্পন ও কল্পরেখা। 

একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন রেজীনা ওয়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্পু, মাসুদুজ্জামান, আহসান উল্লাহ তমাল, আজিজুল বাশার মাসুম ও তামান্না সারোয়ার নীপা।  দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে আঙ্গীকাম, নটরাজ, স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র,  ঘাসফুল নদী শিল্পী গোষ্ঠী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন মীরা মন্ডল, ফেরদৌসী কাকলী, রত্না সরকার, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, আবিদা রহমান সেতু, শিমুল সাহা, সৌরভ, সঞ্জয় কবিরাজ, মাহজাবিন রহমান শাওলী, এস এম মেজবাহ, আঁখি বৈদ্য ও আরিফ রহমান।